বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত

দরকার রিসার্চ, আইন সংস্কার ও বাস্তবায়ন

জিন্নাতুন নূর

পরিবহন মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যোগসাজশেই পরিবহন খাতে নৈরাজ্য চলছে। কিন্তু নৈরাজ্যজনক অবস্থার জন্য দায়ী চক্র এ খাতের সংস্কার চায় না। এ চক্রের কারণেই পরিবহন আইন সংস্কার করা যাচ্ছে না। আবার রাজধানী ঢাকায় যে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তার ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী খোদ পথচারীরা। দেশে নিয়ম মেনে গণপরিবহনের চালক নিয়োগ হচ্ছে না। গণপরিবহনের অশিক্ষিত চালকরা প্রায়ই গাড়ি চালানোর সময় প্রতিযোগিতায় নামেন। সর্বোপরি পুরো পরিবহন খাত নিয়ে একটি ’এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ’ করতে হবে। তবেই পরিবহন খাতের নৈরাজ্য, দুর্ঘটনার কারণ ও তার সমাধান সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে পরিবহন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। লেখক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পরিবহন খাতে বর্তমানে যে নৈরাজ্য চলছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। মূলত সুশাসনের অভাবের জন্যই পরিবহন খাতে এ ধরনের নৈরাজ্য চলছে। আমাদের এটি বুঝতে হবে, যখন দুর্ঘটনা ঘটে তার সঙ্গে পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, পরিবহন খাতের যে নৈরাজ্যজনক অবস্থা বিরাজ করছে, এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যোগসাজশে। কিন্তু নৈরাজ্যজনক অবস্থার জন্য দায়ী চক্র এ খাতের সংস্কার চায় না। পরিবহন আইন সংস্কারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি, পরিবহন মালিক থেকে শুরু করে গাড়ি চালকদের অপরাধের জন্য শাস্তিস্বরূপ জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ আইনের সংস্কার চান না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, পরিবহন খাতের এ নৈরাজ্যজনক অবস্থাার জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা যাবে না। রাজধানী ঢাকায় যে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী খোদ পথচারীরা। প্রধান সড়কে চলাচলের সময় পথচারীরা সচেতনতা অবলম্বন না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি গাড়ি চালককে গাড়ি চালানোর সময় যেমন সচেতনতা অবলম্বন করতে হয় একইভাবে পথচারীদেরও পথে চলাচলের সময় সচেতন হতে হবে। অশিক্ষিত হওয়ায় আমাদের গণপরিবহনের চালকরা প্রায়ই গাড়ি চালানোর সময় প্রতিযোগিতা করেন। উন্নত দেশগুলোতে আমাদের মতো গণপরিবহন খাতে এত বেশি মালিকানা থাকে না। তাদের বড়জোর গাড়িগুলোর মালিকানার ক্ষেত্রে একটি বা দুটি ব্র্যান্ড থাকে, যারা পুরো খাতের দেখভাল করেন। আমাদের দেশে তেমন কিছু থাকলে এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটত না। এতে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যাও কমে যেত। বাংলাদেশে পরিকল্পনা অনুযায়ী না চলায় পরিবহন খাতে এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে ও নৈরাজ্য চলছে। তিনি বলেন, গণপরিবহনে যে চালকদের নিয়োগ করা হয় তাদের বেশ কিছু পরীক্ষা পাসের পর এই গাড়ি চালাতে দেওয়ার কথা, যা আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ‘এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ’ করতে হবে। তবেই পরিবহন খাতের নৈরাজ্য, দুর্ঘটনার কারণ ও তার সমাধান সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে।

সর্বশেষ খবর