বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিকলাঙ্গ ব্যাংকিং খাত এখন এতিম : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত এখন বিকলাঙ্গ এতিমে পরিণত হয়েছে। এ জন্য এ খাতের রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন একটা অসামঞ্জস্যের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। কেননা কর্মসংস্থানহীন জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা থেকে বেরিয়ে আয়হীন কর্মসংস্থানের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। নির্বাচনকালীন বছরে দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা আরও বেশি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। গতকাল ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাজেট ২০১৮-১৯ সিপিডির সুপারিশমালা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দেবপ্রিয় বলেন, প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং আয় এই চার মূলনীতির সামঞ্জস্যের ওপর নির্ভর করে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা। এখন বিবেচনার সময় এসেছে এই চারটি মূলনীতি ঠিক আছে কি না। গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে এটা পরিষ্কার যে, আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানও বেড়েছে। অথচ প্রকৃত আয় কমে গেছে। মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ধরা হলো ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু বিতরণ হয়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। অথচ বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির অবস্থায় রয়েছে। তাহলে টাকা গেল কোথায়। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় আয়হীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে গ্রামের মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের আয় কমেছে বেশি। বেকার সমস্যার কথা বলতে গিয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আগে কথা ছিল ‘পড়ালেখা করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে’, কিন্তু এখন তা বদলে গিয়ে হয়েছে ‘পড়ালেখা করে যে, বেকার থাকে সে’। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট কোনো রোগ নয়। এটা রোগের উপসর্গ। আসলে রোগ হচ্ছে, সরকার ব্যাংক খাতকে বিকলাঙ্গ করে তুলেছে। সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা রয়েছে ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার ও আমদানি খাতে। এ তিনটি খাতের মাধ্যমে অর্থের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। ফলে এ তিনটি খাতকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। কিন্তু সেটা নেই। দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের একটা আর্থিক ভ্রম সৃষ্টি হয়েছে। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ব্যাংক থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। আমদানি বাড়ছে। বিনিয়োগের যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ছে। অথচ ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে না। চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়াবে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

 যদিও এনবিআর বলছে সেটি হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আর্থিক খাতের অবস্থা আরও নাজুক হতে পারে। এ জন্য প্রান্তিক পর্যায়ের গরিবমানুষের সহায়তায় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গা খাতে কীভাবে খরচ হচ্ছে, কারা এতে সহায়তা দিচ্ছেন, কীভাবে বণ্টন হচ্ছে—এ বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা আনার পরামর্শও দিয়েছেন সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো। তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিষয়ে গত বছরের শুরুতে আমরা বলেছিলাম, ২০১৭ সাল ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির বছর। এবার আমাদের মনে হচ্ছে, ব্যাংকিং খাত নিতান্তই এতিমে পরিণত হয়েছে। এর রক্ষকরাই এখন এই শিশু, এতিমের ওপর অত্যাচার করছেন। যাদের এটা রক্ষা করার কথা ছিল, তারাই বিভিন্ন চাপের মুখে নানা কাজ করে যাচ্ছেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডিপির রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন ও আগামী বাজেটের জন্য কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা প্রয়োজন। রাজস্ব বাড়াতে কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। এ ছাড়া করপোরেট কর কমানোর সরকারি ঘোষণা আরও বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সংস্থাটির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর