শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

খবর নেই খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের

শারীরিক অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠায় কেন্দ্রের সমালোচনা তৃণমূলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আন্দোলন কর্মসূচির সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাও দিতে পারেনি কেন্দ্র। এ কারণে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভও রয়েছে কেন্দ্রের প্রতি। অবশ্য মাঠের কর্মীদের এ যুক্তি মানতে নারাজ কেন্দ্র। তাদের দাবি, ধীরে চলো নীতির বার্তা দিয়ে গেছেন খোদ চেয়ারপারসনই। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই মাঠের আন্দোলনে নামতে হবে। এ নিয়ে কেন্দ্র-তৃণমূলে চলছে যুক্তি পাল্টা যুক্তি। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিই এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও জোরালো কর্মসূচি থাকতে হবে। তবে নির্বাচন বর্জন কোনো সমাধান নয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রায় আড়াই মাস ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে। তাকে নিয়ে আইনি লড়াইয়েও কার্যকর কোনো ফল হচ্ছে না। রাজপথেও জোরালো কোনো কর্মসূচি নেই। প্রথমদিকে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দিলেও এখন পুরোপুরি ঠাণ্ডা। বেগম জিয়া কারাগারে আর নেতা-কর্মীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। 

চট্টগ্রাম বিভাগের এক জেলা পর্যায়ের নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কারাগারে যাওয়ার আগে কেন্দ্রের নেতাদের মুখে তারা শুনেছেন, বিশেষ আদালতে সাজা হলেও ওইদিনই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করা হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

আইনজীবীরা আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, এটা জামিনযোগ্য মামলা। কোনো কারণে জেল হলেও মুক্তিতে তেমন বিলম্ব হবে না। কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা ভাবতেই পারেননি বেগম জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হবে। তারা ভেবেছিলেন, দুই চার দিন কারাগারে থাকলেও বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। এটা পুঁজি করেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবে বিএনপি। ওই নেতা এখন আশঙ্কা করে বলছেন, বেগম জিয়াকে একাদশ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। নির্বাচনের আগে তার মুক্তির সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এখন কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো পথ খোলা নেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকুক বা মুক্ত হোক, বিএনপিকে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিএনপিকে বড় দলের অহংকার ভুলে যেতে হবে। দলের নেত্রীর জন্য শুধু আইনি লড়াই যথেষ্ট নয়, রাজপথেও থাকতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। সব গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠন করতে হবে। বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাদের বুঝতে হবে, বেগম জিয়াকে জেলে রেখেই সরকার আরেকটি নির্বাচন করতে চায়। আর সে জন্যই তারা নতুন নতুন কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে এক ধরনের দরকষাকষি চলছে বলে মনে হচ্ছে। কমবেশি আসন দিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতার প্রস্তাবও লোকমুখে শুনছি। কিন্তু খালেদা জিয়া যদি ৯০’র মতো আপসহীন হন, তাহলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর হবে না। কোটাবিরোধী আন্দোলনে তা কিছুটা বোঝা গেছে। কিন্তু তিনি আপস করলে বিএনপির আরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, এখন বিএনপির উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন দাবিতে আন্দোলন। কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। আর বিএনপি যদি বসে থাকে তাহলে তাদেরই খেসারত দিতে হবে। কারণ দলের নেতৃত্বের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। কিছু নেতা তো আছেন, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা জেলকে ভয় পান। তাদের দিয়ে আন্দোলন হবে না। এই গ্রুপটাকে আওয়ামী লীগ কাজে লাগাতে পারলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। আর যদি না পারে তাহলে তৃতীয় শক্তির উত্থানও হতে পারে। এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গতকাল বিকালে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়কে কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তার  বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের ছেলে অভি, বড় ছেলে তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানু ও তার মেয়ে শাহিনা খান জামান বিন্দুসহ কয়েকজন। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের তারা বলেছেন, ‘ম্যাডাম’ ওপর থেকে নিচে নামতে পারছেন না। তার শারীরিক অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদেরও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর