এখনো গ্রেফতার হননি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। প্রকাশ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে, বাড়ি ছেড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রনির হাতে নির্যাতিত ইউনিএইড নামে একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়া। মামলা দায়েরের পর রনির প্রাণনাশের হুমকিতে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা রনিকে খুঁজছেন। রনির নির্যাতনের ঘটনাটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে রনির বিরুদ্ধে রাশেদের মামলা এবং ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরপরই তাকে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, নগর ছাত্রলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে শিবির কানেকশনও। তিনি এক সময় শিবিরের সাথী ছিলেন বলেও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ১৯৯৯ সালে মুসলিম হাইস্কুলের শিবিরের অংকুর পাহাড়িকা জোনের বাইতুলমাল সম্পাদক হন রনি। এসব তথ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। পরে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিতি পান। এর আগে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনা না মিটতেই এ ঘটনায় চট্টগ্রামজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত কারণে সজ্ঞানে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লেখা আবেদনপত্রে উল্লেখ করলেও কেন্দ্রীয় কমিটির চাপের মুখে রনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ছাত্রদের পক্ষে আন্দোলনের একপর্যায়ে অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মারধর করে সমালোচিত হন রনি। এ ঘটনায় রনিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয় চকবাজার থানায়। এ ছাড়া ২০১৬ সালে হাটহাজারীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন রনি। সে সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দেন। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। পাঁচলাইশ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তথ্য প্রমাণ হিসেবে বাদী কিছু ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপ জমা দিয়েছেন। তবে রনিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নুরুল আজিম রনি এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, অভিযোগকারী তার ব্যবসায়িক পার্টনার ও বন্ধু। পাওনা টাকা না দিতেই পুরনো এবং মীমাংসিত বিষয়কে নতুন করে সাজিয়ে তিনি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। চাঁদা দাবির ঘটনা সঠিক নয়। নুরুল আজিম রনিকে টেলিফোনে পাওয়া না গেলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লেখা আবেদনে ফেসবুক সূত্রে জানা গেছে, ‘পিতা মুজিবুরের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম। একান্ত ব্যক্তিগত কারণে আমি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এমতাবস্থায় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আবেদন করছি।’ ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়ার (রাশেদ খান) মামলার সূত্রে জানা গেছে, নোমান চৌধুরী রাকিবসহ অজ্ঞাতনামা ৭৮ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আট বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের (ইউনিএইডের-ইউনিভার্সিটি এডমিশন কোচিং) পরিচালকের দায়িত্বে আছি। বিবাদীরা দীর্ঘদিন আমার অফিস জোর করে ব্যবহার করতেন। আমি ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলে জোর করে টাকা আদায় করতেন। অফিস ব্যবহার করতে না দিলে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ে ইউনিএইড কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় রনিসহ বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে অনধিকার প্রবেশ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় আমি বলি, এত টাকা কোথা থেকে দেব। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ১ নম্বর আসামি (রনি) আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে। ৬ মিনিটের বেশি সময় মারধর করেন। এক মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। এরপর ১৩ এপ্রিল আমি সুগন্ধার বাসা থেকে বের হয়ে মুরাদপুর মোড়ের পূর্ব পাশে মাজারের সামনে পৌঁছলে আসামিরা টানাহেঁচড়া করে একটি গলিতে নিয়ে যান এবং রনি ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় মারধরও করেন। অনেক কষ্টে তাদের বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা পরে দেব বলি। তখন রনি পাসপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বললে আমি রাজি হই। এরপর নোমান চৌধুরী রাকিব মোটরসাইকেলে আমাকে সুগন্ধার বাসায় নিয়ে এলে আমার ও স্ত্রীর পাসপোর্ট এবং ৩৫ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দিই। এরপর তারা আমাকে চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিম পাশের গেটে ফেলে যান।
পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। কিন্তু আসামিদের হুমকির কারণে বাসা থেকে বের হতে না পারায় এজাহার দায়েরে দেরি হয়েছে।