শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

বাংলাদেশ-ফিলিপাইন পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে

মানিক মুনতাসির

ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে এসে থমকে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনি সহায়তাদাতারা। কেননা বাংলাদেশ যেদিনই মামলা করবে সেদিনই উল্টো তথ্য গোপন ও দায়িত্বে অবহেলার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধেও মামলা করার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে আরসিবিসি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো এক চিঠির সূত্র ধরে এসব তথ্য জানা গেছে। গত মাসের শেষের দিকে একই চিঠির সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দফতরেও পাঠানো হয়েছে। ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো সময় আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করবে। আবার একই সারসংক্ষেপে আরসিবিসির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রিজাল কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিজেদের গাফিলতির দায় এড়াতে তথ্য গোপন করেছে এবং নিজেদের গাফিলতি আর অবহেলার দায় আরসিবিসির ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। এজন্য তারাও উল্টো মামলা করবে। এতে আরও বলা হয়, আরসিবিসি মনে করে আইন অনুযায়ী যেসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব, তার সবই ফিলিপিন্সের সিনেট ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়েছে আরসিবিসি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত কিছুই প্রকাশ করেনি। বরং তারা লুকিয়ে রেখেছে। কেননা এতে তাদের নিজেদের গাফিলতি ফাঁস হয়ে যাবে।

রিজার্ভের চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইন সফর করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ও আইন উপদেষ্টা আজমালুল হোসেন কিউসি। পরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি জানান, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাকাটা যখন নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক থেকে চলে যায়, ওই সময় ২৭ থেকে ২৮টি ট্রানজেকশন হয়েছিল। আমরা ধারণা করছি, ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংকের ১৫ থেকে ২০ জন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত। এত বড় ট্রানজেকশন হয়েছে অথচ তারা কোনো প্রতিবেদনই দেয়নি। অর্থ পাচারের সঙ্গে আরসিবিসির নিচ থেকে ওপরের অনেক কর্মকর্তাই এতে জড়িত রয়েছেন।

 তাই আরসিবিসির বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি মামলা করতেই পারি। কারণ দেওয়ানি মামলা করতে সময় লাগবে।’ তখন আরও জানানো হয়, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নিউইয়র্কে এই মামলা করা হবে। মামলার বাদী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও থাকবে। সে হিসাব অনুযায়ী আগামী মাসের শুরুতেই মামলার কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এ সময়ের মধ্যে আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান দিলে মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসতে পারে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি ভুয়া মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তর করা হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। সেখান থেকে দেড় কোটি ডলার ইতিমধ্যে ফেরত এসেছে। বাকি অর্থ ফেরতের ব্যাপারে টালবাহানার মাধ্যমে ইতিমধ্যে দুই বছরেরও বেশি সময় ক্ষেপণ করেছে ফিলিপাইন।

সর্বশেষ খবর