শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ব্যাংক নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে

রুহুল আমিন রাসেল

বাংলাদেশ ব্যাংক নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে

ড. আতিউর রহমান

নৈতিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক— এমন আক্ষেপ করে ব্যাংকটির সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নৈতিক বল ছিল, সেই বলটা ভেঙে পড়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল আমার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এটা ভেঙে দিয়েছে। এটা আমার জন্য কষ্টকর। বাংলাদেশ ব্যাংক মাথা উঁচু করা একটি প্রতিষ্ঠান, সে কেন এত দুর্বল হবে? দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টানা দুই মেয়াদে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞ ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ে অনেকটা খোলামেলা ও প্রাণবন্ত হয়েই সমকালীন অর্থনীতি, নিজের জীবন কর্ম, স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

গরিবের অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই গভর্নর সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে নিজের কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মান-মর্যাদা, স্বায়ত্ত শাসন, সবকিছু বাড়িয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছিল। তিন-তিনবার বিশ্বে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুবার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর হিসেবে আমি পুরস্কার পেয়েছি। তবে আমার একটা আক্ষেপ। সেটি হলো— বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নৈতিক বল ছিল, সেই বলটা ভেঙে পড়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল আমার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে মেরুদণ্ডটা ছিল, সেটা ভেঙে দিয়েছে। এটা ভেঙে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এটা আমার জন্য কষ্টকর। বাংলাদেশ ব্যাংক মাথা উঁচু করা একটি প্রতিষ্ঠান। সে কেন এত দুর্বল হবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নিজের আরেকবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. আতিউর রহমান বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংক যখন পরিচালনা করেছি, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি। আমি যেদিন প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকে পা দিলাম, সেদিন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ছোট একটি এসএমএস (খুদে বার্তা) করলেন যে— প্লিজ ওয়ার্ক ফর দ্য পুওর (গরিবের জন্য কাজ করবেন)। এই বার্তাকে আমার কাজের জন্য শির ধার্য মনে করেছিলাম। সারাক্ষণ আমি গরিবের জন্য কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি একক সিদ্ধান্তে আমাকে গভর্নর বানিয়েছিলেন। আবার কোনো দায়িত্ব পেলে গ্রহণ করবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে গবেষণারত এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেন— আমি জনস্বার্থে যে কোনো দায়িত্ব পালন করতে রাজি। আমার এ জীবন জনগণের সমর্থনে শুরু করেছি এবং জনগণ, বিশেষ করে সাধারণ মানুষের কল্যাণ আমার জীবনের একটা বড় ব্রত। সুতরাং আমি যেখানেই থাকি না কেন, সাধারণ মানুষের জন্যই কাজ করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এই শিক্ষক মনে করেন— বাংলাদেশের অর্থনীতি জোর কদমে এগিয়ে চলেছে। প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ খুব ভালো করছে। সবই কিন্তু খুব ভালো লক্ষণ। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে যে, এই প্রকল্পগুলো সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে যেন আর্থিক অস্থিতিশীলতার মুখে না পড়ে। বিশেষ করে নির্বাচনের এই বছরে। সুতরাং আর্থিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে কোনো মূল্যে এই আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে এবং সহজেই যেন সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে সেই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আরেকটি হলো— জিনিসপত্রের দাম যেন না বাড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ভোটাররা কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়লে খুব কষ্ট পাবে। কোনো অবস্থাতেই মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে, সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে।

নির্বাচনের এই বছরে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, মানুষ যেন মনে করে এই সরকার জনগণের জন্য ভালো কাজ করছে। ভালো কাজ করাই যথেষ্ট নয়। জনগণও যেন মনে করে সরকার ভালো কাজ করছে।

 এই রকম একটি পরিবেশ সবসময় বজায় রাখতে হবে সর্বত্র। সবচেয়ে বড় কথা আর্থিক স্থিতি যেন বজায় থাকে। ডলারের দাম যেন স্থিতিশীল থাকে। মূল্যস্ফীতি যেন কম থাকে। সুদের হার যেন ঠিক থাকে। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোরকম চ্যালেঞ্জের মধ্যে না পড়েন। এটাই এই সময়ে আমার সবচেয়ে বড় পরামর্শ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর