শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার চার প্রস্তাব

গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার চার প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নারী শিক্ষা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অসামান্য স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সম্মাননা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গতকাল সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে। এই পুরস্কার গ্রহণ করার পর অনুষ্ঠানে তিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। সিডনির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের গালা ডিনারের পর পুরস্কার গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী নারী অধিকার নিশ্চিত করতে একটি জোট গঠনের তাগিদ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেনস’ বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জন্য এই পুরস্কার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের সফরে গতকাল সকালে সিডনি পৌঁছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এই ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ যেসব নারী তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন সেসব নারীদের উৎসর্গ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এ অনুষ্ঠানে নৈশভোজের পর শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগে তার সম্পর্কে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়ন এবং নারী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারীদের প্রতি সমর্থন ও অধিকার নিশ্চিতে একটি নতুন জোট গঠন করতে হবে। যে যার জায়গা থেকে নারীদের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত এবং সম্মানবোধ করছি। আমি বিশ্বব্যাপী নারীদের এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি; যারা ভাগ্য পরিবর্তনে নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। শেখ হাসিনা তার চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, প্রথমত, নারীর সক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রচলিত একমুখী ধারণা পরিহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রান্তিক ও ঝুঁকির মুখে থাকা নারীরা এখনো কম খাদ্য পাচ্ছে, স্কুলে যেতে পারছে না, কম মজুরিতে কাজ করছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কোনো নারী ও মেয়েকে পেছনে রাখা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, তৃতীয় বিষয় হলো নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে এবং চতুর্থত, জীবন ও জীবিকার সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পর পর দুই দফায় তার নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণেই সুষ্ঠু, অধিকারভিত্তিক, লিঙ্গ সংবেদনশীল এবং বাস্তবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন নারী ক্ষমতায়নের রোল মডেল। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সংগ্রামে বাঙালি নারীদের ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কথা উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে নিজের সংগ্রামের কথাও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থানে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

সর্বশেষ খবর