শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

দ্রুত এগোচ্ছে পদ্মা সেতুর চার লেন

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

দ্রুত এগোচ্ছে পদ্মা সেতুর চার লেন

নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু ঘিরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা চার লেন মহাসড়ক তৈরির কাজ। ঢাকার বাবুবাজার লিঙ্ক রোড থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। নির্মাণের বিশাল যজ্ঞ দেখে এ পথের যাত্রীসাধারণ বিস্মিত হয়ে ভাবেন ‘এ দেশে এত বিরাট কাজ হয়!’ মূলত চার লেন হলেও এখানে থাকছে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য আরও দুটি পৃথক লেন, ফলে এ সড়কটি হচ্ছে ছয় লেনের। নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর। এ বছরের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ মাসে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ৩৫ কিলোমিটার কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ ভাগ। নির্মাণ ব্যয় কিলোমিটারপ্রতি ১২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক এই ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক। এটা নির্মিত হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে।

বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের (এসডব্লিউও—পশ্চিম)। প্রকল্পের শতভাগ বাস্তবায়ন হবে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে। সূত্রটি আরও জানায়, ৫৫ কিলোমিটার এ মহাসড়ক নির্মাণে ২০টি পিসি গার্ডার ও ১১টি আরসিসি সেতু থাকছে। আর বড় সেতুর মধ্যে ২৫৮ দশমিক ০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ধলেশ্বরী-১, ৩৮২ দশমিক ০৫ দৈর্ঘ্যের ধলেশ্বরী-২ ও ৪৫০ দশমিক ০৫ দৈর্ঘ্যের আড়িয়াল খাঁ সেতুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া ৪৫টি কালভার্ট, ৩টি ফ্লাইওভার, গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় একটি ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সিরাজদিখানের নিমতলা হয়ে শ্রীনগরে দোগাছি হয়ে মাওয়ার পদ্মা সেতু টোল প্লাজা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণকাজে বড় বড় আকৃতির ক্রেন ও ভারী মেশিনারি ব্যবহূত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে শ্রমিকরা রোদবৃষ্টির মধ্যে অবিরাম কাজ করে চলেছেন। নির্মাণকাজে ব্যস্ত একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজদিখানের কুচিয়ামোড়া এলাকায় ধলেশ্বরী-২ সেতুর পাইল নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। একই সঙ্গে সুপারস্ট্রাকচারে পার্ট ও গার্ডারের কাজও করা হচ্ছে। এ ছাড়া ধলেশ্বরী-১ সেতুর ৯টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ৩টির কাজ প্রক্রিয়াধীন। পাইল ও খুঁটি নির্মাণের কাজ শেষ। ৪৫টি কালভার্টের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরের ফ্লাইওভারের পাইল, পিলার, ক্যাপ ও পিলারের হেডের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে, যা এখন শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটিসূত্র জানায়, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য আগের চেয়ে বেড়েছে। জমি অধিগ্রহণ, খননকাজ, বালু ভরাট, মাটির কাজের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় ধার্য ছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সেটা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৮৪ টাকা করার প্রস্তাব করেছে স্টিয়ারিং কমিটি। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ২০১৫ সালে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পসহ এ মহাসড়কটি নির্মাণ হলে তা হবে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এক মাইলফলক। দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন কলকারখানা। ওই এলাকার মানুষের জীবনমান হবে আরও উন্নত। বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর