শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাতীয় নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দেবে না হেফাজত

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

জাতীয় নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দেবে না হেফাজত

জুনায়েদ বাবুনগরী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে না বলে দাবি করেছেন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল হিসেবে হেফাজতে ইসলামের নিবন্ধনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনমুখী সংগঠন নয়। এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আক্বিদাভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন। তাই হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তবে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ইসলামিক বিভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা যদি নিজস্ব দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, সেটা তাদের দলীয় ব্যাপার। এটার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পর্কও নেই। আমি নিজেকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার চেষ্টা করি সবসময়। হেফাজতে ইসলামও একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের সম্ভাবনা নেই হেফাজতে ইসলামের।’ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্কের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ এ কওমি আলেম। নিজেকে খাঁটি দেশপ্রেমিক দাবি করে বলেন, ‘আমি সবসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিই। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সবসময় আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। যখন হাটহাজারী মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্রের ক্লাস নিই, তখন তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে বক্তব্য দিই। দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ, এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’ ধারণা রয়েছে সরকারের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব রয়েছে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব নেই, আবার দুশমনিও নেই। আমি সরকারের বিরোধী নই। তবে নাস্তিক ও বাতেল অপশক্তির বিরোধী। নাস্তিক ও বাতেলরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বলে আমি তাদের বিরোধিতা করি। তাই তাদের দোসরদের সঙ্গে আমার সখ্য হয় না।’ সৌদি আরব সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সিনেমা হল ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনকে ইসলামের জন্য অশুভ সংকেত বলে মনে করেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলামের এ শায়খুল হাদিস। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব হচ্ছে ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। ওই জায়গায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সিনেমা হল ও কথিত বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন অশুভ সংকেত। এতে করে ফিতনা ও ফ্যাসাদ বৃদ্ধি পাবে। তাই সৌদি সরকারের ওই নীতি থেকে সরে আসা উচিত।’ হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আদায় আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৩ দফা আদায় আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান। তবে এখন আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। ভবিষ্যতে দাবি আদায় আন্দোলনের জন্য আমরা কর্মসূচি দেব।’ সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে বলে মনে করেন এই আলেম। তার মতে, সিরিয়ায় যেভাবে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে তা অমানবিক। অমানবিক নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। বিশ্বের সব সংস্থাকে এ নির্যাতন বন্ধের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান বাবুনগরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের ওপর যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের নির্যাতন না হয় সেদিকে বিশ্ব সম্প্রদায়কে নজর রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর