রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা যেন থাকে সে প্রত্যাশা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় তার ব্যবস্থা, পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী এরই মধ্যে করেছি। এখন থেকে শুরু করছি, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল আমরা বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চাই, কী উন্নতি করতে চাই। আমরা সেই ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু করে দিয়েছি।

অস্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষে আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখা আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সিডনি শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিকালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্যই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে আগামী ছয় বছর পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এর অবস্থানকে ধরে রাখার লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি কীভাবে দেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধী, খুনি এবং দেশের উন্নয়নের প্রতি অনাস্থাশীল চক্র যাতে কোনোভাবে আর কোনোদিন এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে। দেশের মর্যাদার বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে যেখানেই বাস করুন না কেন, আপনাদের দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করে দেশের সম্মানকে তুলে ধরতে হবে, যে সম্মান আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়েই আমরা এই শহীদদের প্রতি যথাযথভাবে সম্মান জানাতে পারি। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব, মর্যাদা নিয়ে চলব, মাথা উঁচু করে চলব। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তার সরকারের ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা নেই, ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বিএনপি কিন্তু তা নিত না, অ্যাডহক বেসিসে তাদের পরিকল্পনা ছিল। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও আশু বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার ফলে দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধান রাজনৈতিক পক্ষের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, ক্ষমতাকে নিজেদের ভোগ-বিলাসের বস্তু বানিয়েছে, ক্ষমতা মানে কোনো বাদশাহর দরবারে গিয়ে কী দেখে আসল, গালফ স্টেটে গিয়ে কী একখান চেয়ারের রং দেখল, কোথায় একটা সোফা দেখল, কোথায় একটা গয়না দেখল, কোথায় হীরে জহরত দেখল, কোথায় ফ্রেঞ্চ শিফন দেখল, কোথায় কী দেখল— ওর জন্য জীবন তাদের চলে যাচ্ছে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আমরা খেয়ে পরে ঘর থেকে এসেছি। আমরা তো চা-বাগান থেকেও আসিনি, আর ওই কুচবিহার থেক কুচ কুচ বিহারি হয়েও আসিনি। ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে তার সরকারের এই ৯ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিস্তারিত তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ড. মিল্টন হাসনাত, গামা আবদুুল কাদির, আনিসুর রহমান রিতু, প্রদ্যুৎ সিং চুন্নু এবং নিরাজুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক শেখ শামিমুল হক।

অস্ট্রেলিয়ার সেরা জ্ঞান নিন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ার সেরা জ্ঞান আহরণের সুযোগ গ্রহণের জন্য সেখানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু ডিগ্রি নিলে হবে না, সমুদ্রসম্পদ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। অনেক কিছু শিখতে হবে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনকালে সেখানকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া একটি প্রিয় গন্তব্যস্থল। দেশের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের       মাধ্যমে উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আমাদের আরও বেশি মানবিক ক্ষমতা দরকার। অস্ট্রেলিয়া এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দান ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় প্রশিক্ষণ দিয়ে অবদান রাখতে পারে। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাংলাদেশি প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর এ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাছে যান এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি সেখানে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। এদিকে ক্যাম্পাসে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারকন্টিনেন্টাল সিডনি হোটেলে যান। সেখানে আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জেফরি স্ট্রোকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ অব্যাহত রাখবে’ অস্ট্রেলিয়া : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। গতকাল সিডনিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানিয়েছেন। বিকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে টার্নবুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, এ দুই নেতার মধ্যে দেড় ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উঠলে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি তার দেশের সমর্থনের কথা জানান টার্নবুল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তাদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণের বিষয়েও টার্নবুলকে জানান শেখ হাসিনা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীও ছিলেন।

সর্বশেষ খবর