রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোরিয়ায় শান্তির চাবি যেখানে

ট্রাম্প বললেন, চাপ অব্যাহত থাকবে

প্রতিদিন ডেস্ক

উত্তর ও দক্ষিণ কোরীয় নেতার ঐতিহাসিক বৈঠকের পর আন্তর্জাতিক মহলে এখন একটিই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে, এই বৈঠক কোরীয় দ্বীপে শান্তি এনে দেবে কিনা। এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষকরা নানা ধরনের বিশ্লেষণ করেছেন। তবে সব বিশ্লেষণেই বলা হচ্ছে, পুরো শান্তির চাবিকাঠি নির্ভর করছে ট্যাম্প-কিম বৈঠকের ওপর। সূত্র : রয়টার্স।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, গত শুক্রবার কিম-মুন বিরল বৈঠকটি সাম্প্রতিক সময়ের প্রধানতম আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের মতো জটিল ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য তারা হাতে গোনা কয়েক ঘণ্টা সময় পান। দিনের আলোচনাকে একটি আনুষ্ঠানিক যৌথ ঘোষণায় পরিণত করাটা ‘কঠিন’ হবে বলে মনে করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রধান সচিব ইম জং সিওক। মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোরিয়ান পেনিনসুলা ফিউচার ফোরামের জ্যেষ্ঠ গবেষক দুয়েওন কিম বলেন, ‘মুনের চ্যালেঞ্জ হবে একটি যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে সম্মত হওয়া যা ভালো বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতার অনুভূতিকে ছাপিয়ে আরও কিছু মনে হবে।’

খবরে বলা হচ্ছে, মুন নিজেও এই বৈঠকে শান্তি ঘোষণার সম্ভাবনার ওপর তেমন একটা জোর দেননি। সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি চুক্তি করতে হলে কোরীয় যুদ্ধে অংশ নেওয়া অন্য পক্ষগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অনুমোদন লাগবে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যুদ্ধ শেষ করতে’ মুন ও কিম অপেক্ষাকৃত কম উচ্চাভিলাষী একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেন। এটি চুক্তিতে পৌঁছানোর খুব কাছাকাছি একটি পদক্ষেপ। ২০০০ ও ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী আন্তঃকোরীয় সম্মেলনে একই রকমের পদক্ষেপ দেখা গিয়েছিল। কোরিয়ান পেনিনসুলা ফিউচার ফোরামের জ্যেষ্ঠ গবেষক দুয়েওন কিম মনে করেন ‘পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে মূল খেলাটা হবে ট্রাম্প ও কিমের বৈঠকে।’ আর ইয়োনসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জন ডেলুরি বলেন, ‘মার্কিনিরা এ বৈঠক থেকে কোনো দৈববাণী আশা করছে না, কিন্তু কিম যে আলোচনাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন তার নমুনা দেখতে চাইছেন তারা।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্য কী তা সুস্পষ্ট নয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণেই আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত হয়েছেন কিম। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিকে বিকল করে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। গত বছর সামরিক হুমকি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এসব নিষেধাজ্ঞা আরও জোরালো করা হয়। আসান ইনস্টিটিউটের গবেষক কিম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠককে উত্তর কোরিয়া  দেখছে ‘ওয়াশিংটনকে শান্ত করার এবং নিষেধাজ্ঞার মতো ইস্যুগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার একমাত্র পথ’ হিসেবে।

উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ রাখবই —ট্রাম্প : ঐতিহাসিক বৈঠকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা কোরীয় উপদ্বীপকে ‘পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত’ করতে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখবই। নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য উপায়ে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে। সূত্র : রয়টার্স। শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের মধ্যে বৈঠককে স্বাগত জানালেও পারমাণবিকীকরণ বন্ধে পিয়ংইয়ংয়ের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া ওয়াশিংটন পিছু হটবে না বলেও জানান ট্রাম্প। আগের মার্কিন প্রশাসনগুলোকে পিয়ংইয়ং ‘বেহালা’র মতো বাজিয়ে নিজেদের কার্য উদ্ধার করেছিল বলে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আগের প্রশাসনের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করব না। পারমাণবিক মুক্ত অবস্থা অর্জন করার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাপ অব্যাহত থাকবে।’ ওয়াশিংটনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। ‘কিমকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের কর্মসূচি বাতিল করতে হবে’ উল্লেখ করে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে দুই কোরিয়ার মধ্যে নানান বৈঠকে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিকীকরণের পথ থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যদিও এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও সিউলের সমর্থনে উপদ্বীপজুড়ে বসানো ‘পারমাণবিক ছাতা’ সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু শর্ত পূরণ না করায় প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়নি।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিস জানান, তার দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আস্থা বাড়াতে কাজ করবে। যদিও ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনী সরানোর কথা থাকলে কী হবে— সে বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কিমের আচরণে তারা অভিভূত হলেও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার হুমকিকে তারা ভুলে যাচ্ছেন না। অপারমাণবিকীকরণে কিম সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না দিলে ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংকে আগের চোখেই দেখবে বলেও ভাষ্য তাদের।

এক বিবৃতিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার যে কোনো প্রতিশ্রুতিকে যুক্তরাষ্ট্র ‘যাচাই করে নেবে’। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অবশ্য বলছেন, কিম যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাচ্ছেন সে ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

সর্বশেষ খবর