শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কা দেখছে সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয়ভিত্তিতে করায় দিনে দিনে তৃণমূল পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সংঘর্ষ আরও বেড়ে যাবে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে। খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন নিয়ে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

সুজন সম্পাদক বলেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ইসিকে আন্তরিক হতে হবে। ইসিকে সরকারের সহযোগিতা করতে হবে। তা  না হলে ইসি একাই কখনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে পারবে না। তিনি বলেন, গাজীপুর ও খুলনায় আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে আয়ের দিক থেকে এগিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। গাজীপুরের মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বছরে সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। আর খুলনায় পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক সবচেয়ে বেশি আয় করেন। এই দুটি সিটি করপোরেশন এলাকায় কাজ করতে গিয়ে এই পর্যবেক্ষণের তথ্য পেয়েছেন বলে জানান সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, হলফ করে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করা দরকার এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সংবাদ সম্মেলনে ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ড. শাহদীন মালিক। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘সুজন’-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুরে প্রার্থীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। তবে মেয়র প্রার্থীরা সবাই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে।

গাজীপুরে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী মিলিয়ে ৩৪৫ জনের মধ্যে ২১৯ জনের পেশা ব্যবসা। খুলনায় ১৯২ জনের মধ্যে ১২৬ জনের পেশা ব্যবসা। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশনের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। অথচ আমাদের সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা। ড. শাহদীন মালিক বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের অধিকাংশই স্বল্প-শিক্ষিত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাদের অধিকাংশই আয়কর দেন না। এর বিপরীতে আমরা যদি নির্বাচনে বেশি পরিমাণে সমাজসেবী, পেশাজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী প্রার্থী পেতাম তাহলে প্রার্থীদের মানের উন্নতি ঘটত এবং আমরা তুলনামূলক ভালো কাউন্সিলর পেতাম। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা দরকার। কমিশন যদি নির্বাচনের আগে তা করতে না পারে তাহলে শপথ গ্রহণের আগে অন্তত বিজয়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের তথ্য যাচাই করতে পারে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য পাওয়া গেলে যদি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে কেউ ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য দেবে না। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুধু প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাই যাচাই হবে না, একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জনপ্রিয়তা ও কর্মদক্ষতার প্রকাশ ঘটবে। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়ায় এ নির্বাচন দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, নির্বাচন দুটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।

সর্বশেষ খবর