সোমবার, ৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের আমেজে হঠাৎ স্তব্ধতা

পুলিশের অভিযান সরকারের বাড়িতে, নোমানসহ আটক ৭, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

গতকাল বেলা পৌনে ৩টায় আদালতের রায়ে হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায় গাজীপুর মহানগরের নির্বাচনী আমেজ। ভোটের নয় দিন আগে উৎসবমুখর নগরী হঠাৎই প্রাণহীন হয়ে পড়ে। গতকাল বেলা আড়াইটায় হাই কোর্ট এক আদেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। তাত্ক্ষণিক এ খবর ছড়িয়ে পড়ে নগরীর অলি-গলিতে। এ সময় গণসংযোগে ঘাম ঝরাচ্ছিলেন সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচার বন্ধ করে দেন তারা। উৎসব-আমেজে মুহূর্তেই ছেদ পড়ে। এ খবর শুনে টঙ্গীতে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, পরাজয়ের ভয়ে সরকার নির্বাচন স্থগিত করেছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে হাসান সরকারের বাসভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ সাতজন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ হাসান সরকারের বাসভবন ঘিরে রাখে। রাত পৌনে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাসভবনে অবস্থান করছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, হাসান উদ্দিন সরকারসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।  এদিকে রাত সাড়ে ১০টার সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজীপুরের গাজারিয়া পাড়ার মোহাম্মদ রোমান হোসেন নামে এক কনফেকশনারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘এ মুহূর্তে স্থগিত না করে ভোটটা দিলেই ভালো হতো। মানুষ অনেক আশা করেছিল, ১৫ মে ভোট দেবে। কিন্তু তা হলো না। আমরা খুবই হতাশ।’

উচ্চ আদালত যেন বিষয়টি বিবেচনা করেন : বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। জনগণ ও আমার দাবি হচ্ছে, নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি যেন উচ্চ আদালত বিবেচনা করে। নাগরিকের অধিকার হলো ভোট। নির্বাচন স্থগিত করায় সব প্রার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর আগে সকালে জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ সময় গাজীপুরে ম্যাট্রিক্স সোয়েটার কারখানায় পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে এফবিসিসিআই ও বিকেএমইএর শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত থেকে তাকে সমর্থন দেন। পরে সেখান থেকে তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের  কোনাবাড়ী এলাকায় কয়েকটি কারখানায় নির্বাচনী প্রচারে যান।

ভরাডুবির ভয়ে নির্বাচন স্থগিত : গতকাল দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি সরকারের এহেন ভূমিকায় তীব্র  ক্ষোভ প্রকাশ করছি। এখানে সরকারি দলের প্রার্থীর নিশ্চিত ভরাডুবি ছিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনে ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই সরকার ভীত হয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছে। বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সারা জীবন লড়াই করেছি। এদিকে হাসান উদ্দিন সরকারের বাসায় পুলিশি বেষ্টনিতে অবরুদ্ধ থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ অন্য নেতা-কর্মীরা রাত ১১টার দিকে বেরিয়ে যান।

সরকারের করণীয় নেই : আদালতের রায়ে সরকারের করণীয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আদালত স্বাধীন। এর আগে আদালত সরকারের বিরুদ্ধেও রায় দিয়েছে। গতকাল বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।  হাছান মাহমুদ বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আদালত কী রায় দিয়েছে তা সম্পর্কে আমি এখনো ওয়াকিবহাল নই। যতটুকু জেনেছি, ৬টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় রিটের ভিত্তিতে নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে।

ভোট স্থগিত সরকারের কারসাজি : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিতের ঘটনাকে ‘সরকারের কারসাজি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার নিজেদের পরাজয় জেনেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট স্থগিত করেছে। কারণ, তারা জানে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। সে জন্য দলীয় লোক দিয়ে রিট করে নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। গতকাল হাই কোর্টে রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রায় দেওয়ার পর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ভোটের কয়েক দিন আগে তা স্থগিত করা সরকারের স্পষ্ট কারসাজি। কারণ যিনি রিট করেছেন তিনিও সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের  নেতা। তাই পরাজয়ের ভয়ে আদালতের মাধ্যমে এটি করিয়েছেন। নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তখন আপনাদের তা জানানো হবে।

নতজানু ইসি ব্যর্থ আবারও প্রমাণিত : নির্বাচনের মাত্র নয় দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য হাই কোর্টে স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের অদূরদর্শিতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই। গতকাল এক বিবৃতিতে পীর সাহেব আরও বলেন, সীমানা জটিলতায় মামলা ইসির জানা থাকার কথা। তারপরও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন নতজানু ও অথর্ব হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

জাহাঙ্গীরকে মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী : গাজীপুর সিটি  নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে নির্বাচনী মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে গণভবনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেন নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে হতাশ না হতে বলেছেন। যেহেতু নির্বাচন আদালত স্থগিত করেছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আইনিভাবেই এর সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর