সোমবার, ৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রাক বাজেট আলোচনা

আবাসন শিল্পে ১০ বছর কর অবকাশ চায় বিএলডিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার বাইরে আবাসন শিল্প বিকাশে আগামী ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ)। সংগঠনটি বলছে, আবাসনখাত এই সুবিধা পেলে ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমবে। তাই ঢাকার বাইরে মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫ বছর এবং অন্যান্য পৌর এলাকায় ১০ বছর কর অবকাশ বা ‘ট্যাক্স হলিডে’ ব্যবস্থা চালু করা উচিত। গতকাল সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব দিয়েছে বিএলডিএ। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য দেন, বিএলডিএ মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দিন, বসুন্ধরা গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান, এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি ও বাজেট) মো. ফিরোজ শাহ আলম প্রমুখ। প্রাক-বাজেট সভায় আবাসনখাতে সেকেন্ডারি বাজারে জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রির নিবন্ধন ফি ৭ শতাংশের পরিবর্তে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, যেসব জমি বা ফ্ল্যাট প্রথম বিক্রির পর পাঁচ বছরের মধ্যে পুনরায় বিক্রি হবে, শুধু সেসব জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বিক্রির জন্য সেকেন্ডারি মার্কেট চালু করা আবশ্যক। বিএলডিএর এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে এবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর বিষয়ে আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে একটি চিঠি পাঠাতে পারি। এর আগে বিএলডিএ মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দিন বলেন, আবাসন শিল্প খাত দেশের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক আয়ের খাত। জাতীয় উন্নয়নে এই খাতের অবদান ২১ শতাংশ। মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার বাসস্থানের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন শিল্পের ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আবাসন শিল্পের ২৬৯টি উপখাতে কমপক্ষে ১২ হাজার শিল্প-কারখানা চালু আছে এবং এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই খাতের সঙ্গে দেশের আড়াই লাখ মানুষের রুটি ও রুজি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই অত্যন্ত নিম্ন আয়ের লোক। আবাসন খাতের এ সংগঠন থেকে অর্থ আইন ২০১৩-এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-র ধারা ১৯বি পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ধারার বিধান অনুযায়ী একজন করদাতা যদি আবাসিক প্রয়োজনে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বা নির্মাণে বিনিয়োগ করেন এবং সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের পরিমাপের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করেন— তাহলে কর বিভাগ বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা বা এজেন্সি আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য এ আইনটি কার্যকর করার সুপারিশ করেছে বিএলডিএ। আবাসন খাতে বিনিয়োগের ওপর নানা ধরনের মূসক ও করের অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থপাচার হচ্ছে উল্লেখ করে বিএলডিএ নেতারা বলেন, দেশের বাইরে গিয়ে অনেকেই এখন খুব সহজে বাড়ি করতে পারছেন। ওই দেশগুলো এই অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলে না। কিন্তু আমাদের দেশে জমি কেনা বা ফ্ল্যাট কিনতে কেউ যদি ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন করেন তাহলেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে ডেকে বসে। এ কারণে অনেকে ভয় পেয়ে দেশে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে বাড়ি করতে পারছেন না। ওই অর্থ বিভিন্ন উপায়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবাসন শিল্প রক্ষার্থে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব জানিয়ে বলা হয়েছে, এ তহবিল থেকে ক্রেতাসাধারণকে চাহিদামতো জমি বা প্লট কিনতে সর্বনিম্ন সুদে ঋণ প্রদান করা প্রয়োজন। আবাসন খাতে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঋণ সরবরাহ করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

প্রদত্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজউক ও সিডিএ আওতাধীন এবং আওতাবহির্ভূত এলাকায় জমির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ ও ৩ শতাংশ হারে কর নির্ধারণের ফলে ক্রেতাদেরও ব্যয় বেড়েছে। এই কর কমিয়ে ২ শতাংশ ও ১ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশ, মূসক ১.৫ শতাংশ—এভাবে মোট নিবন্ধন ফি ও কর ৭ শতাংশ নির্ধারণ প্রয়োজন। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতার কারণে সার্বিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ আবাসন শিল্প খাতটি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সরকারের নীতি সহায়তার অপ্রতুলতা—যেমন মাত্রাতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন-সংশ্লিষ্ট ফি ও কর হার, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার, তারল্য সংকট এবং আয়কর আইনের কিছু ধারা এই শিল্পের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ফলে এই খাতে বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ সেকেন্ড হোম, বিজনেস মাইগ্রেশনসহ অন্যান্য সহজ শর্তে বিনিয়োগের আওতায় বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের আবাসন শিল্প খাত রক্ষার্থে আসন্ন জাতীয় বাজেটে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। স্থবির আবাসন শিল্পে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিএলডিএর প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর