সোমবার, ৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আহমেদ আল আমীন

কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

আবদুল বাসেত মজুমদার

আইন পেশায় ৫০ পেরিয়েছেন আরও আগেই। ক্লান্তি ভুলে অবিরাম তার পথচলা। এখনো ছুটে বেড়ান শহর থেকে গ্রামে, জনপদে, মানুষের কাছে। আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যস্ত রাখেন নিজেকে। এভাবে জীবনের আশি বসন্ত কাটিয়েও আরও কাজ করতে চান সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার।

তিনি মনে করেন, কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষের জন্য যদি কিছু করতেই না পারলাম তবে বৃথাই এ মানবজীবন। সবার উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা। আবদুল বাসেত মজুমদার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শীর্ষপদ ছাড়াও আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন দুবার। ওকালতিকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন, দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এ ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে দেশের ৭৬টি আইনজীবী সমিতিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা দান করেছেন। কর্মনিষ্ঠা ও সেবায় একজন বাসেত মজুমদার অনেকের জন্যই আদর্শ বটে। বার কাউন্সিলের আসন্ন নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্যানেল থেকে এবারও তিনি প্রার্থী। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে বাসেত মজুমদার বলেন, আমি বরাবরই আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকি। বার কাউন্সিলের গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আইনজীবীদের বেনেভোলেন্ট ফান্ডে টাকা বাড়িয়েছি। বার কাউন্সিলের জন্য ১৫ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। একনেকে বিষয়টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নবীন আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়নে দেশের প্রতিটি বিভাগে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ছয়টি বিভাগে ৫ হাজারের বেশি আইনজীবীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনজীবীদের বেনেভোলেন্ট ফান্ডে ৪০ কোটি টাকা সরকারি অনুদানের আশ্বাস পেয়েছি। এবারের নির্বাচনেও জয়লাভ করতে পারলে আইনজীবীদের কল্যাণে আরও কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বার কাউন্সিল ভবনের কাজ সম্পন্ন ও ঢাকায় একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয় ও আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনে এর প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিরোধী দলে থাকলে আমাদের সরকার সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকে। সরকারি দলে থাকলে নানা কারণে আমাদের সেই সম্পর্কে ঘাটতি আসে। বিভেদ মেটাতে দুটি সংগঠনকে একত্রিত করা হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্বন্দ্ব কোন্দল মেটেনি। অনেকের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। নানা কারণে কখনো কখনো তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এসব কারণে কোন্দল তৈরি হয় ও জিইয়ে থাকে। কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে সুপ্রিম কোর্ট বারে আমরা পরাজিত হয়েছি। আশা করি এর প্রভাব বার কাউন্সিল নির্বাচনে পড়বে না। এখানে আমাদের প্যানেল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। আইনজীবীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার সমর্থক আইনজীবীদের একটি সংগঠনে নিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে সবাই আশা করেছিল এবার কোন্দল নিরসন হবে। কিন্তু কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি না পেয়ে অনেকের মধ্যে অভিমান আছে। বার কাউন্সিলের এই নির্বাচনের পর অচিরেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। আশা করি পূর্ণাঙ্গ কমিটির পর কোন্দল নিরসন হবে। আইন পেশায় নবীনদের সম্ভাবনা নিয়ে বাসেত মজুমদার বলেন, বর্তমানে আইন পেশায় নবীনদের উপস্থিতি বেশ আশাব্যঞ্জক। অনেক নতুন ছেলেমেয়ে এখন আইন পেশায় আসছে। এটি খুশির কথা। তারা এ পেশায় ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।

 কিন্তু একটি কথা হলো, এ সেক্টরে টিকে থাকতে হলে প্রচুর পড়াশোনা ও ধৈর্য থাকতে হবে। সবুর না করলে মেওয়া ফলবে না। এ বয়সেও এত কাজের উদ্যম ও প্রেরণা পান কীভাবে? মৃদু হেসে বাসেত মজুমদার জবাব দেন, মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আনন্দ পাই। মনে প্রশান্তি অনুভব করি। একদিন আমি এ পৃথিবীতে থাকব না, কিন্তু আমি মনে করি আমার কাজ থেকে যাবে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। দেশের ৫০ হাজার আইনজীবী যদি বছরে অন্তত দু-তিনটি মামলা বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পরিচালনা করেন, তাহলে অসহায় বিচারপ্রার্থীরা বিচারবঞ্চিত হবে না। ন্যায়বিচার পাবে। অন্যদিকে মানবসেবা হবে।

সর্বশেষ খবর