শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট হবে গাজীপুরে

২৮ জুনের মধ্যে করার নির্দেশ উচ্চ আদালতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোট হবে গাজীপুরে

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ২৮ জুনের মধ্যে আইন অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। হাই কোর্ট ওই নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে গাজীপুর সিটিতে ভোটগ্রহণ আটকে গিয়েছিল। তবে আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে ভোটের দুয়ার খুলেছে। এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আগামী রবিবার নতুন তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওবায়দুর রহমান মোস্তফা। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। আর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও এস এম শফিকুল ইসলাম।

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, রিট আবেদনকারী তথ্য গোপন করে হাই কোর্টে     রিট করেছেন। এর আগে একই বিষয়ে তিনি দুটি রিট করেছেন। আবেদনে তিনি একটির আংশিক তথ্য দিয়েছেন, অন্যটির তথ্য উল্লেখ করেননি। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আলোচ্য ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেই নির্বাচন হয়েছে। ওই ব্যক্তির রিট করার যৌক্তিকতা নেই, কারণ তিনি গাজীপুর সিটির ভোটার নন। রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সাভারের ওই ছয়টি মৌজা আইন বহির্ভূতভাবে গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার গেজেটে বলা হয়েছে, গাজীপুর ও টঙ্গী নিয়ে করপোরেশন হবে। ওই গেজেটে এই ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনে নিতে হলে, পরিষদ এলাকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এই গণবিজ্ঞপ্তি দেবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। কিন্তু ঢাকা জেলা প্রশাসন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল না। এক পর্যায়ে আদালত বলে, সীমানা নিয়ে ৪ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেট হয়েছে। পরে নির্বাচনের তফসিল হয়েছে। এরও অনেক পরে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হঠাৎ এই রিট কেন? রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গেজেটের দুই মাস পরে এসেছি বলেই কি রিট বাদ হয়ে যাবে? এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে বলেন, ২০১৩ সালে গেজেট হয়েছে, ঢাকা জেলা থেকে ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটিতে গেছে। এভিডেন্স অ্যাক্টের ১১৪ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকে সঠিকভাবেই করা হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। ‘সঠিক না’ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। ওবায়দুর রহমান মোস্তফা বলেন, নির্বাচন স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশে সংবিধানের ১২৫(গ) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইসিকে শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়নি। আদালত বলেন, এটা কোনো নির্বাচনের জন্য? ওখানে আসনের কথা বলা হয়েছে। এটা সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটা তো (গাজীপুরে) সংসদ নির্বাচন নয়। স্থানীয় সরকার আইনে আসেন। ইসির আইনজীবী বলেন, স্থানীয় সরকার আইন বইতো আদালতে নিয়ে আসিনি। আদালত বলে, এখানে বসে বসে সবকিছু আমাদের দেখতে হবে এটা অপ্রত্যাশিত। এক পর্যায়ে আদালত বলে, সিইসি বলেছেন ১৫ তারিখে নির্বাচন সম্ভব হবে না। ইসির আইনজীবী বলেন, আদালত বলে দিলেই সম্ভব। আদালত বলে, আপনি বলছেন সম্ভব, আর সিইসি বলছেন ১৫ তারিখে সম্ভব না। আমরা বুঝতে পারছি না। ইসির আইনজীবী বলেন, হাই কোর্টের স্থগিতাদেশে নির্বাচনের কাজে একটু গতি কমেছে, তবে একেবারে অসম্ভব তা নয়। শুনানির পর বিচারপতিরা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর ফিরে এসে বেলা একটার কিছু আগে রায় ঘোষণা করে আদালত।  নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রার্থীরাও প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়। শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের এ রিটের পর হাই কোর্ট ৬ মে নির্বাচন স্থগিত করে। ওই নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম চেম্বার আদালতের অনুমতিক্রমে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। চেম্বার আদালত দুটি আবেদনই শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। ৯ মে সেই আবেদনের শুনানিতে হাজির হয়ে ইসির আইনজীবীও হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানান। পরে আপিল বিভাগ তিনটি আবেদনের ওপরে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে। সে অনুযায়ী গতকাল শুনানি হয়।

গাজীপুরে ভোটের নতুন তারিখ নির্ধারণ রবিবার : আইনি বাধা কাটায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আগামী রবিবার নতুন তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী রবিবার কমিশন সভা করে ঠিক করবে কবে নির্বাচন হবে। হাই কোর্ট সপ্তাহের শুরুতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের যে আদেশ দিয়েছিল, গতকাল আপিল বিভাগ তা বাতিল করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ২৮ জুনের মধ্যে ওই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ১৫মে ভোটের দিন রেখে গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। সে অনুযায়ী ভোটের প্রস্তুতিও চলছিল। গত বুধবার গাজীপুরে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, লিভ টু আপিলের রায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে গেলেও তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে ওই ভোটের আয়োজন করা আর সম্ভব হবে না, কারণ স্থগিতাদেশের কারণে বেশ কয়েক দিন সময় নষ্ট হয়েছে। আপিল বিভাগ ভোটের জন্য কোনো সময় বেঁধে না দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে সিইসি বলেছিলেন, এর জন্য পুনঃতফসিল  ঘোষণার প্রয়োজন হবে না, শুধু নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করলেই হবে। নির্বাচন আয়োজনে গতকাল আপিল বিভাগের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বিকালে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিবকে নিয়ে বৈঠক করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। পরে ইসি সচিব কমিশনের অবস্থান সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। আদালতের নির্দেশনার সত্যায়িত অনুলিপি কমিশন পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গাজীপুরে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে আমাদের। ১৫ মে যেহেতু গাজীপুরে নির্বাচন হচ্ছে না, সেহেতু কবে, কয়দিন সময় দেওয়া হবে তা নিয়ে কমিশন ১৩ মে বৈঠকে বসবে। ওই কমিশন সভায় গাজীপুরের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে। রোজার মধ্যে ভোট হবে কিনা এবং প্রচারের জন্যে বাকি থাকা সাত দিন সময় দেওয়া হবে কিনা বা  রোজার পরে ভোট হবে কিনা জানতে চাইলে কমিশন সচিব বলেন, এসব বিষয়েও কমিশন সভায় আলোচনা হবে।

নতুন সময় কখন, কীভাবে? : ইসি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে সাধারণত রোজার মধ্যে কোনো সাধারণ নির্বাচন করা হয় না।  ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর পর্যাপ্ততা, বাস্তবতা ও ভোটের পরিবেশ বিবেচনায় অতীতে বড় কোনো সাধারণ বা উপ নির্বাচন রোজায় করা হয়নি। এমনিতে রোজার মধ্যে নির্বাচন করতে কোনো আইনি বাধা নেই। তবে রোজায় ভোট না করলে ইসিকে ১৫-১৭ জুন ঈদের ছুটির পরের কোনো তারিখ ভাবতে হবে। আবার ২৫ থেকে ২৭ জুন সিইসি থাকবেন ইন্দোনেশিয়ায়। ফলে ২৩ বা ২৪ জুন ভোট করার কথা ভাবতে পারে কমিশন। কমিশনের যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ভোটের নতুন তারিখ  দেওয়া হলেও প্রচারের জন্য আর ৭ দিন সময় পাবেন প্রার্থীরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী পুনঃভোটের তারিখ নির্ধারণ হবে। সেক্ষেত্রে প্রচারের সময়ও উল্লেখ করে দেবে কমিশন। প্রার্থীসংখ্যা কোনো হেরফের হবে না। ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রীও নতুন করে আনার প্রয়োজন হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর