শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

টানটান উত্তেজনা খুলনায়

শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ বিএনপির, ভিত্তিহীন বলেছে ১৪ দল, যুগ্মসচিবকে নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে বিতর্ক

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

আর মাত্র চার দিন পরই খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। শেষ মুহূর্তে নগরীতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া করতে পুলিশ গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আর রিটার্নিং অফিসারকে ‘পাশ কাটিয়ে’ একজন যুুগ্মসচিবকে নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও চলছে বিতর্ক।

স্থানীয়রা জানান, দুই প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। যে কোনো নির্বাচনেই শেষ সময়ে এসে একটু উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখানেও ভিন্ন কিছু নয়। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। নির্বাচন সমন্বয়ক হিসেবে নির্বাচন কমিশনের একজন যুগ্মসচিবকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এর কারণে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠেছে, ওই কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে, নাকি তিনি সহযোগিতা করতে এসেছেন। এটা এক ধরনের যৌথ প্রশাসক বা ওভার লেপিং করার মতো বিষয়। এতে আগে যিনি রিটার্নিং অফিসার ছিলেন, তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বেন। আবার নতুন যিনি এসেছেন তিনিও খবরদারি করতে পারবেন না। চানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি একান্ত পর্যবেক্ষক টিম গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের যুগ্মসচিব আবদুল বাতেন টিমের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। ডি এম শাহাদাৎ উদ্দিন উপ-প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ১৩ মে এই টিম খুলনায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। এ ধরনের ঘটনা রংপুর ও গাইবান্ধার নির্বাচনেও ঘটেছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের অংশীদার জাসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বিএনপির প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ভিত্তিহীন। গতকাল দুপুরে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পর খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল, জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ হোসেন, ১৪ দল নেতা এস এম সোলায়মান উপস্থিত ছিলেন।

আম্বিয়া বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ রাখার স্বার্থে আমরা খুলনার রিটার্নিং অফিসারসহ জামায়াত-বিএনপির তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কমিশন তা না করে একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে। বিএনপি তা নিয়েও মিথ্যা অভিযোগ করছে।

নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে : খুলনার পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে চলছে কিনা— এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। গতকাল দুপুরে খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে অসংখ্য অভিযোগ দাখিল করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, মশিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি : এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কয়েক দিন আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি। গতকাল বিকালে দলটির স্থানীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে একগুচ্ছ দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। পরে বৈঠক শেষে বিএনপি এ নেতা সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির মূল দাবি খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। কিন্তু ইতিমধ্যে নেতা-কর্মী ও এজেন্টদের গ্রেফতার-ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত কর্মীরা। তাহলে তো সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে এটা বড় বাধা। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হয় এতে। এখন আর সরকারের দায় নয়, আমরা নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করছি বলেন তিনি।

নজরুল ইসলাম খান জানান, গত কয়েকদিনে গ্রেফতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তির পাশাপাশি নতুন করে যেন আর কাউকে গ্রেফতার করা না হয় তা কমিশনকে জানানো হয়েছে। এজেন্টদের বাড়িঘরে হামলা-ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এজন্য খুলনার পুলিশ কমিশনারসহ তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। খুলনায় একটি ভালো নির্বাচন হতে পারত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভোটে আছি, থাকব। তবে কমিশনের আগ্রহ রয়েছে ভালো নির্বাচনে। কিন্তু তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে। পরে ইসি সচিব বিএনপির দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির দাবি কমিশন বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে। অযথা কাউকে যেন হয়রানি করা না হয় সে বিষয়টি দেখা হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এখনই প্রত্যাহার সম্ভব না হলেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বিষয়ে আমরা নির্দেশ দেব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর