শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরকার ব্যাংক খাতকে দেউলিয়া করে দিয়েছে

সরকার ব্যাংক খাতকে দেউলিয়া করে দিয়েছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নিজেদের লোকদের সরকারি ব্যাংকগুলোতে বড় পদে বসিয়ে লুটপাট করছে। এর মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লোপাট করেছে। তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতকে  দেউলিয়া করে দিয়েছে।  আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার ৯ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা দুই লাখ কোটি টাকা    লুটে নিয়েছে। ঋণের নামে ও বিভিন্ন কারসাজি করে গ্রাহকের এ পরিমাণ অর্থ লুটে নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, সমর্থক ও তাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠী। অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, ননব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। দেশে সুশাসনের অভাব, জবাবদিহির অভাব, দুর্নীতি, লুটপাট, নীতিহীনতা আর বিশৃঙ্খলা সব মিলিয়ে এক অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে ব্যাংকিং খাত। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থা ব্যাংকিং খাতের সার্বিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে ২০১৭ সালকে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর’ হিসেবে  আখ্যায়িত করেছে।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দুই দফায় আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছর মেয়াদকে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির দশক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। মারাত্মক একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

এই আতঙ্ক আগে শেয়ারবাজারে ছিল, এখন ব্যাংকে চলে আসছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে জর্জরিত। ধারদেনা করে চলছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। আমানতকারীরা লাইন ধরে আমানতের টাকা ফেরত নিতে চাইছেন। তারা চেক দিয়েও সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। আশানুরূপ কর্মসংস্থান হচ্ছে না। অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়ে উঠছে। প্রশাসনিক ছত্রচ্ছায়ায় কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংকের মালিকানা জোর করে বদল হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্বয়ং উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছেন, একটি বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংকের নানা কেলেঙ্কারি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সামপ্রতিক আতঙ্কের বিষয়টি বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা থেকে শুরু হলেও প্রকৃতপক্ষে বড় ধরনের ব্যাংক কেলেঙ্কারির শুরুটা হয় ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের ‘হলমার্ক গ্রুপ কেলেঙ্কারি’ থেকে। হলমার্ক গ্রুপের লোপাটকৃত অর্থের পরিমাণ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নাম জড়িয়ে আছে। এ ছাড়া বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১২০০ কোটি টাকার বহুল আলোচিত ঋণ জালিয়াতির কথা সবাই জানে। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ একটি জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘সাত বছরে আত্মসাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকা’। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লাহ ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারিসহ ছয়টি বড় অর্থ কেলেঙ্কারির বিস্তারিত সবার জানা আছে। এ ছাড়া রয়েছে রূপালী ব্যাংক থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নেওয়া হাজার কোটি টাকা, যার ৮০১ কোটি টাকা আদায়ের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ‘নাই’ হয়ে গেলেও সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ বর্তমান ভোটারবিহীন এ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত এ সরকারের এহেন গণবিরোধী অর্থনীতিবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না। একদিন জনতার আদালতে এদের বিচার হবে ইনশা আল্লাহ।

সর্বশেষ খবর