শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুখোমুখি দুই দল সংঘাতের শঙ্কা

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

মুখোমুখি দুই দল সংঘাতের শঙ্কা

তিন দিন পরই নির্বাচন। প্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে দোয়া চাইছেন খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক —বাংলাদেশ প্রতিদিন - প্রচারণায় দিনরাত খুলনা সিটি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু —বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রতিদিনই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে দুই দলের মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে। এই অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। নাগরিক নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের আরও সহনশীল আচরণ করতে হবে। কেএমপি মুখপাত্র জানান, কেউ সংঘাতে জড়ালে, আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

গতকাল সকালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমন্বয়ক এস এম কামাল হোসেনকে অতিথি পাখি উল্লেখ করে বিএনপি প্রার্থী বলেন, আমাদের জঙ্গি চেহারা দেখেননি, আমরা কী করতে পারি, তা আপনার জানা নেই। এর পরপরই সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্যের জবাব দেন এস এম কামাল। তিনি বলেন, বিএনপি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে এটা সবাই জানে। আমি অতিথি পাখি না, এখানকারই ভোটার। কোনো হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না। দুই দলের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার বক্তব্যে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম দিকে পরিবেশটা খুব শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে গত দুই তিন দিনে দুই দলের নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত এমনভাবে চলতে থাকলে ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণের স্বার্থে প্রার্থী ও সমর্থকরা বক্তব্যে সহনশীলতা বজায় রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে দুই দলই শক্ত প্রতিপক্ষ। তাই একটু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হবে এটা স্বাভাবিক। তবে এটা খুব দীর্ঘ সময় চালানো ঠিক না। তিনি বলেন, বাকযুদ্ধের সময়কাল দীর্ঘ হলে সংঘাতে রূপ নিতে পারে। তাই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য দুই দলকেই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশাবাদী শেষ পর্যন্ত সংঘাত হবে না। তবে কেউ সংঘাতে জড়ালে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সংঘাত এড়াতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি জানান।

মঞ্জুর সংবাদ সম্মেলন : গতকাল সকালে নগরীর মিয়া পাড়াস্থ নিজ বাসভবনে দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পুলিশি নির্যাতন, অপ্রচারের মাধ্যমে আরও একবার সরকারের দানবীয় চেহারা ফুটে উঠেছে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের লোক নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে বসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের ডেকে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। প্রতিদিনই আমার নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ একই সুরে কথা বলছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দলের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সমন্বয়ক এস এম কামাল হোসেনের উদ্দেশে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘কামাল সাহেব তো খুলনা থাকেন না, তিনি তো অতিথি পাখি হিসেবে এই নির্বাচনে এসেছেন। উনি আমাদের চেহারা দেখেননি, জঙ্গি চেহারা। আমাদের রাজপথের শক্তি উনি দেখেননি। এই শহরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি আমার ভূমিকা দেখেননি। এ জন্য তিনি জানেন না, এই শহরে আমরা কী করতে পারি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহসী যোদ্ধা হিসেবে আমার নাম এক নম্বরে। সঙ্গে আমার কর্মীরাও রয়েছে।’ মঞ্জু আরও বলেন, ‘আমাদের মিছিল বড় হচ্ছে, জমায়েত বড় হচ্ছে। এটাই সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ।

এস এম কামালের সংবাদ সম্মেলন : বিএনপি প্রার্থীর বক্তব্যের বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল সকাল ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে তিনি নিজেই জঙ্গিবাদ এবং জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক। বিএনপি জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এটা সবাই জানে। তিনি বলেন, বিএনপির সময়েই খুলনা সন্ত্রাসের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। খুন সন্ত্রাস বেড়েছিল। বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে দেশের ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা দেশবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। বিএনপি এখন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো একটি অকার্যকর দেশে পরিণত করতে চাইছে।

তিনি বলেন, মঞ্জু সাহেব বলেছেন, আমি এখানে অতিথি পাখি হয়ে এসেছি। তার জানা থাকা উচিত আমি খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। এ সময় নিজের ভোটার স্লিপ উঁচিয়ে দেখান তিনি। কামাল বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে আমি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে খুলনার কলেজগুলোতে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছি। চরম দুঃসময়ে রাজপথে মিছিল-সংগ্রাম করেছি। খুলনা সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। দলের প্রধানের ইচ্ছায় এখন ঢাকায় আছি।’ তিনি বলেন, আমি অতিথি হলে মঞ্জু সাহেবও বাইরের লোক। কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, আমি এসব হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না। বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের জড়ো করছেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

ধানের শীষের প্রচারে দক্ষিণের বিএনপি নেতারা : নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল জানান, আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম সাবেক মেয়র মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এবং বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিনসহ দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতারা নিরলসভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে। গত ৩ এবং ৪ মে বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে দক্ষিণা বিএনপির একটি দল খুলনায় গিয়ে দলীয় মেয়র প্রার্থী মঞ্জুর পক্ষে প্রচারণা চালান। সরোয়ারের নেতৃত্বাধীন দলে বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর