সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাত পোহালেই ভোট খুলনায়

শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা । ২৮৯ কেন্দ্রের ২৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ । মাঠে বিজিবি, কঠোর নিরাপত্তা । আবহাওয়া দুশ্চিন্তা

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

রাত পোহালেই ভোট খুলনায়

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মাঠে নেমেছে বিজিবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আজ রাত পোহালেই কাল ১৫ মে মঙ্গলবার খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট দেবেন মহানগরীর প্রায় পাঁচ লাখ ভোটার। এদিকে হুমকি-পাল্টা হুমকি ও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যদিয়ে গতকাল রবিবার মধ্যরাত থেকে প্রচারণা শেষ হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো খুলনা সিটি নির্বাচনে (কেসিসি) দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে ভোট হতে যাচ্ছে। মেয়র পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক (নৌকা) ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের মো. মুজ্জাম্মিল হক (হাতপাখা), সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)। আজকের নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে  ১৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত ১০টি নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৯ জন। কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় ভোটের দিন আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।

খুলনা সিটিতে এবার মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ৪ হাজার ৯৭২ জন ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করবেন। দুটি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। এ দুটি কেন্দ্রের ১০টি বুথের দুই হাজার ৯৭৮ ভোটার ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী জানিয়েছেন, ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে ভোট কেন্দ্রে যে কোনো বিশৃঙ্খলা কঠোর হস্তে দমনের ঘোষণা দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। নির্বাচনী পরিবেশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে জানিয়ে ইউনুচ আলী ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ কেন্দ্রে পাঠানো হবে ব্যালট পেপারসহ ভোটগ্রহণের সামগ্রী।

এদিকে কেসিসির মোট ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে থাকবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা। ভোট উপলক্ষে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মাঠে রয়েছেন।  গতকাল  থেকে টহলে নেমেছে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। গতকাল নগরীর  মোড়ে মোড়ে পুলিশকে তল্লাশি করতেও দেখা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের খুলনা পৌরসভা থেকে উন্নীত হয়ে হয় খুলনা সিটি করপোরেশন। গত পাঁচ বছর খুলনার নগরপিতা হিসেবে সরকারি দলের কেউ না থাকায় উন্নয়ন অনেকটা কম হয়েছে বলে মনে করেন নগরবাসী। এ কারণে যিনি নাগরিক সমস্যা দূর করতে কাজ করতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই এবার নগরপিতা হিসেবে দেখতে চান তারা।

বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা : রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচনে কোনো ঝামেলা হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালালে কঠোরভাবে দমন করা হবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নেই ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন, এ জন্য আমরা সব ব্যবস্থাই নিয়েছি। আজ সোমবার প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালিসহ নির্বাচনী সরঞ্জার কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এসব মালামাল বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

মাঠে ১৬ প্লাটুন বিজিবি : নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৬ প্লাটুন (৬৪০ জন) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে বিজিবির সদস্যদের নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। বিজিবি খুলনা সেক্টরের কর্মকর্তা মেজর হান্নান খান জানান, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তার দিকে সতর্ক নজর রাখছেন।

মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য : অবাধে ভোটগ্রহণের জন্য মাঠে থাকবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৯ হাজার ৫৩৮ জন সদস্য। এর মধ্যে বিজিবির ৬৪০ জন, পুলিশের ৩ হাজার ৪৩৭, র‌্যাবের ২৯৬ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ৩০০, আনসার ব্যাটালিয়ন ৮১৯, আনসার ভিডিপির ৪ হাজার ৪৬ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোবাইল কোর্ট হিসেবে মাঠে থাকবেন ৬২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া তিন/চার প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখা হবে বলে জানা গেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ২৩৪টি : কেসিসি নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৫টিকে তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী এ বিষয়ে জানান, ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র ও ৫৫টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণভাবে বিবেচিত হয়েছে।

আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা : খুলনার আবহাওয়া কয়েকদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। কখনো প্রখর রোদ, আবার কখনো মৌসুমি ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। কাল আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ঝড়-বৃষ্টি ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। তবে ঝড়-বৃষ্টিতে যাতে ভোট গ্রহণ বা গণনা কার্যক্রম বিঘ্নিত না হয়, সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর