সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দাবিতে ক্লাস বর্জন

এ আন্দোলন সমীচীন নয় : কাদের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই সময় তারা সব ক্লাস-পরীক্ষাও বর্জন করবে বলে ঘোষণা দেয়। এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পরও যারা এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের জন্য আন্দোলন করছে তা সমীচীন নয়। বরং ছাত্রসমাজের উচিত ক্লাসে ফিরে যাওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা। প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের বিষয়ে দেওয়া ঘোষণার প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না করায় গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এ ঘোষণা দেন। নুর বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। ৩২ দিন পার হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে সরকার ওয়াদা করেছে ৭ মের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনো জারি করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন কোটা থাকবে না। তার কথা অলিখিত আইন। কিন্তু এর পরও আমরা শুনছি, এখন কমিটি করা হয়েছে। আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না।’ ছাত্ররা কারও প্রতিপক্ষ নয় উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপন জারি হলে কোনো ছাত্র আর রাজপথে থাকবে না। আমরা আনন্দ মিছিল বের করব। তাই আজ (গতকাল) বিকাল ৫টার মধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আমরা আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করব।’ বিকাল ৫টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের কোনো ঘোষণা না আসায় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

‘এখন কোটা নিয়ে আন্দোলন সমীচীন নয়’ : এদিকে কোটা পদ্ধতি বাতিলে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেওয়ার পরও গেজেট প্রকাশের দাবিতে ফের আন্দোলনের হুমকি সমীচীন মনে করছেন না সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কোটা নিয়ে শিগগিরই সমাধান মিলবে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাসে ফিরে পড়াশোনায় মন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়টি ফয়সালা করে দিয়েছেন— কোটা থাকবে না। এরপর কখন গেজেট হলো কি হলো না, এখানে একটু চিন্তাভাবনার আছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জেলা, মুক্তিযোদ্ধা, নারী আছে— এখানে একটা সুসমন্বিত কিছু করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন বিদেশে ছিলেন। তবে প্রক্রিয়াটা থেমে নেই। যার জন্য আন্দোলন, কোটাটাই বাতিল করা হয়েছে।’ কোটা বাতিল করে দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, আন্দোলনকারীদের তাতে আস্থা রাখার পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমি ছাত্রসমাজকে বলব, তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির ব্যাপারে সরকার খুবই সহানুভূতিশীল এবং সক্রিয়। যৌক্তিক সমাধানের সব রকমের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। আমি তাদের বলব একটু ধৈর্য ধরতে। অনতিবিলম্বেই তারা সমাধান পেয়ে যাবে। এ নিয়ে আন্দোলন, পরীক্ষা-ক্লাস বর্জন করায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। আমি আশা করি তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে, পড়াশোনায় মন দেবে।’

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কুমিল্লা : কোটাবিরোধী আন্দোলকারী সন্দেহে গতকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাসে হামলা হয়েছে। ছাত্রলীগের এ হামলা নিয়ে নগরীর পুলিশ লাইন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিকালে সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্ররা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি ছাত্রবহনকারী বাস পুলিশ লাইনে  কুমিল্লা সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হামলা চালান কুমিল্লা মহানগর ও কুমিল্লা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা ছাত্রবহনকারী বিআরটিসির একটি বাস সম্পূর্ণ ভাঙচুর করেন। ওই তিনটি বাসে থাকা ছাত্ররা নেমে এসে হামলাকারীদের ওপর পাল্টা হামলা করেন। লাঠি এবং ইট-পাটকেল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ঝাউতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস সড়কে আড়াআড়ি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সড়ক বন্ধ করে দেন। ছাত্রলীগের কর্মীরা কুমিল্লা সরকারি কলেজে অবস্থান নিয়ে হামলা করেন। তারা মুখোশ পরে ছাত্রদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ও লাঠি নিয়ে তাড়া করেন।

সর্বশেষ খবর