সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আটকা পড়েছে হাজার হাজার যানবাহন

ঢাকা-চট্টগ্রাম এখনো ৪৫ কিমি যানজট

প্রতিদিন ডেস্ক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া যানজট গতকাল বিকাল পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার রপ্তানি পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন যানবাহন। মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় নির্মাণাধীন ফোরলেনের রেলওয়ে ওভারপাসের উত্তরে কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি এবং দক্ষিণে জোরালগঞ্জ পর্যন্ত উভয়দিকে অন্তত ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনের জন্য এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেনীর ফতেহপুর রেলক্রসিং এলাকা। এখানে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাস এবং সড়কে খানাখন্দের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমাহীনভাবে বেড়ে গেছে। গতকাল বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যানজট ওই রেলক্রসিংসের উত্তরে কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। হাইওয়ে পুলিশের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার ফাঁড়ির এসআই শাফায়াত বলেন, ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণজনিত কারণে এ সড়কে ফোরলেনের যানবাহন এক লেনে চলাচল করছে। ফলে মহাসড়কে যানজট বাড়ছে। এ ছাড়া সড়কের খানাখন্দ ও বৃষ্টির কারণে যানবাহনের ধীরগতিও যানজটের কারণ।

এদিকে, যানজটে পড়ে দুর্ভোগের কারণে মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে যাত্রী কমে যাওয়া এবং কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে বিকল্প পথে বাস চলাচল করায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে বাসের যাত্রীনির্ভর অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসায় চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। চৌদ্দগ্রামের হোটেল হাইওয়ে ইন এর জিএম শাহ আলম জানান, আগে এ হোটেলে দৈনিক ৪০-৪৫টি যাত্রীবাহী বাসের যাত্রাবিরতি হলেও এখন আসে চার-পাঁচটি। হোটেল তাজমহল কমপ্লেক্সের ম্যানেজার আল আমিন জানান, আগে দিন-রাতে শতাধিক বাসের যাত্রাবিরতি হলেও এখন দাঁড়ায় ১০-১৫টি। তারা জানান, বেচা-বিক্রি একেবারে কমে গেছে, কিন্তু হোটেলের বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তিন বেলা খাবার, বেতন-ভাতা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলসহ সব খরচ নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে হোটেল ব্যবসা গুটিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না। গতকাল দুপুরে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবুল ফয়সাল জানান, এ যানজট চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঢাকা অভিমুখের জগন্নাথদীঘি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। যানজট নিরসনে থানা ও হাইওয়ে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানান, ফেনী রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণজনিত কাজের কারণে চার লেনের গাড়ি এক লেন দিয়ে চলাচল করার কারণে ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের প্রচেষ্টার কারণে যানজট কমে এসেছে বলে তিনি দাবি করেন।সওজ ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ফেনী শহরে প্রবেশপথ পুরনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকায় সংস্কার কাজ চলার কারণে এ পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এটি মহাসড়কে যানজট সৃষ্টির একটি কারণ। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে ২ মাসের মধ্যে কাজ শেষে সড়কটি খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর রেলওয়ে ওভারপাসের কাজটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুতগতিতে চলছে।তবে রেলওয়ে ওভারপাসের একটি লেন আগামী ১৫ মে খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন এ অবস্থা আর থাকবে না।  যাত্রীদের ভরসা ট্রেন : এদিকে, আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, দীর্ঘ যানজটের কারণে সড়কপথের যাত্রীদের নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। কয়েকদিন ধরেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ লাইন আর লাইন। গাড়িচালকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার ওপর ঘুমিয়ে দিন পার করছেন।

নানা ভোগান্তি ঠেকাতে ট্রেনের টিকিট নিতে ধুম পড়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য গতকাল সকাল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনসহ প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগিও সংযোজন করেছে রেলওয়ে। ভোগান্তি ঠেকাতে ট্রেনই যাত্রীদের একমাত্র ‘ভরসা’ বলে জানান একাধিক যাত্রী। সকাল থেকেই অতিরিক্ত বগির সংযোজন করলেও সেই সোনার হরিণ পেতে শত শত যাত্রী স্টেশনে জড়ো হয়েছে। ঈদের মতো প্রতিটি ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড়ও লক্ষণীয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চাপ পড়েছে রেলপথে।

আজম নামের সোনার বাংলার এক যাত্রী বলেন, সড়কপথে যাওয়ার জন্য টিকিট নিয়েও ফেরত দিয়েছি। দীর্ঘ কিলোমিটার লাইনের পর লাইন। ঢাকায় জরুরি মিটিং আছে। যানজটে পড়ে গেলে মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ট্রেনই শেষ ভরসা। তূর্ণানিশিথার ডা. তাইবিন নামের আরেক যাত্রী বলেন, সকালে গিয়েই বারডেম হাসপাতালে ডিউটি করতে হবে। সড়কপথে গিয়ে যানজটের মধ্যে পড়ে থাকতে হবে। তাই ট্রেনেই যাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) মিজানুর রহমান বলেন, সড়কপথে যানজটের কারণে যাত্রী বেড়ে গেছে। এসব যাত্রীদের ট্রেন সুবিধার জন্য অতিরিক্ত বগিও সংযোজন করা হয়েছে।

আজ সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘট : আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানান, জনভোগাস্তি দূর ও বিভিন্ন দাবিতে আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক পরিবহন ইউনিয়ন। গতকাল দুপুরে সমিতির সদস্য সচিব মৃণাল চৌধুরী সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফেনীর ফতেপুর, মেঘনা সেতু, সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট স্কেলসহ বিভিন্ন স্থানে দুঃসহ যানজট সহনীয় করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর