সদ্যসমাপ্ত খুলনা সিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও অস্বাভাবিক ভোট গ্রহণের বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাল ভোট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটের দিন তাত্ক্ষণিকভাবে যে তিনটি ভোটকেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছিল তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে কমিশন। এদিকে খুলনা সিটির ভোটে অনিয়ম ও অস্বাভাবিক ভোট গ্রহণ নিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট ও ছবির বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা খতিয়ে দেখে রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই সিটি নির্বাচন তদারকির জন্য পাঠানো নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী, উপপ্রধান সমন্বয়কারী ও সংশ্লিষ্ট ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষককেও অস্বাভাবিক ভোট গ্রহণ এবং অনিয়মের বিষয়ে কমিশনকে তথ্য অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত তাদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ভোট গ্রহণের দিন নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ভবন-২), লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়, লবণচরা। এসব এলাকার অনিয়ম তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা ২২-২৩ মে তদন্ত করবেন। পরে আগামী ২৭ মের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন। ইসির যুগ্ম-সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে উপসচিব ফরহাদ হোসেন ও সিনিয়র সহকারী সচিব শাহ আলমকে সদস্য করা হয়েছে এ কমিটির। কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে—প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন; বন্ধ ঘোষিত কেন্দ্রের সব কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের বক্তব্য, তাদের নাম-ঠিকানা, এজেন্টদের বক্তব্য, প্রকৃত দোষী/ব্যক্তি/কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, খুলনা নির্বাচনে ২৮৬ কেন্দ্রের মধ্যে অনিয়মে স্থগিত তিন কেন্দ্র বাদ দিয়ে গড়ে ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে। নানা অনিয়মে শতাধিক কেন্দ্রে জালিয়াতির অভিযোগ আনলেও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো অন্তত ১২ ধরনের অনিয়ম দেখেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। রিটার্নিং অফিসারের ঘোষিত ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মেয়র পদে ২৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ৯১.৩৮%, ৯৭.৬০% ও ৯৯.৯৪% ভোট পড়েছে। তার মানে এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে মাত্র একটি ব্যালট পেপার শুধু বাকি ছিল সিল মারতে। আর ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে ৯টি কেন্দ্রে ও ৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে ৪৫টি ভোট কেন্দ্রে। ভোটের পর বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা খুলনার ভোট ও ফল পর্যালোচনা করেছেন। কেন্দ্রে ভোটের হার : সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ২২.৬৫% (কেন্দ্র নম্বর ১১৭)। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ৯৯.৯৪% (কেন্দ্র ৭৩)। ২০-৩০% : কেন্দ্র ১টি (১১৭ নম্বর)। ৩০-৪০% : কেন্দ্র ১টি (৬৩ নম্বর)। ৪০-৫০% : কেন্দ্র ১৬টি। ৫০-৬০% : কেন্দ্র ৮১টি। ৬০-৭০% : কেন্দ্র ১৩০টি। ৭০-৮০% : কেন্দ্র ৪৫টি। ৮০-৯০% : কেন্দ্র ৯টি (৭২, ১৮৫, ২১১, ২১৭, ২৩০, ২৩৭, ২৩৮, ২৫৩ ও ২৭৪ নম্বর)। ৯০-১০০% : কেন্দ্র ৩টি (৭৩, ৭৪ ও ১৮৪ নম্বর)। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মতে, কেন্দ্রের ভিতরে সহিংসতা, অবৈধ সিল মারা, ভোটদানে বাধা, ভোটারদের যানবাহনের সুবিধা, গ্রেফতার, কেন্দ্রে অনুমোদিত মানুষের উপস্থিতি, ভোটারকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, কেন্দ্র বন্ধ, পুনরায় ভোট, পর্যবেক্ষককে বাধা, কেন্দ্রের ৪০০ গজে প্রচারণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।