বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
দৃষ্টি এবার গাজীপুরে

খুলনার অভিজ্ঞতায় জয় চায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

খুলনা সিটি করপোরেশনের জয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গাজীপুরে জয় চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য কেন্দ্র থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনৈক্য দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলা হচ্ছে। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনের সার্বিক মনিটরিং করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে তিনি ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা ও উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় ও গাজীপুরের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—কোনো অজুহাত শুনতে চান না তিনি। খুলনার চেয়ে আরও ভালো ব্যবধানে গাজীপুরে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের শক্তঘাঁটি বলা হয় গাজীপুরকে। এ ছাড়া গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবদুল মান্নানকে ভোট দিয়ে প্রত্যাশিত সেবা পায়নি নগরবাসী। তাই, এবার সরকারদলীয় প্রার্থীকেই বেছে নেবেন প্রত্যাশা নেতাদের। সে কারণে প্রথমে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা না থাকলেও দলের বর্ধিত সভা, ইফতার পার্টি, ও কর্মিসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলা হচ্ছে।  সূত্রমতে, খুলনার কৌশল ও ফল গাজীপুর সিটি নির্বাচনের কৌশল প্রণয়ন সহজ করে দিয়েছে। খুলনার নেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা ও কৌশল গাজীপুরের নেতাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলছে, নির্বাচনে জিততে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই। গাজীপুর সিটিতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কারণে পূর্বের ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করে জয়ের মিশনে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীনরা। এই পর্যায়ে গত রবিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ১৩ জন নেতা গাজীপুরে গিয়ে স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের বাসায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা অনৈক্য দূর করে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ‘ঐক্যবদ্ধ’ হয়ে দলীয় মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমকে উদার ও নমনীয় হয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলেন নেতারা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল। সরকারের উন্নয়নগুলো প্রচারণা চালানো হয়েছে। প্রার্থীরও ইমেজ ছিল। সব মিলে আমাদের জয় এসেছে। গাজীপুরের স্থানীয় এমপি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির উদ্দেশে বলেন, এই নির্বাচনে কোনো রকম ঝামেলা যেন না হয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রার্থী কে হলো সেটা বিষয় নয়, নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।  আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুলনার বিজয়ে দলীয় প্রচারণায় যে মূলমন্ত্র কাজে লাগানো হয়েছিল তা গাজীপুরের নির্বাচনেও কাজে লাগানো সম্ভব। খুলনায় আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ছিল। গাজীপুরেও সেই সুযোগ কাজে লাগাব। তিনি বলেন, খুলনার মানুষ বর্তমান বিএনপির মেয়রের দ্বারা যেমন কোনো উন্নয়ন পায়নি, তেমনি গাজীপুরেও বিএনপির মেয়র কোনো উন্নয়ন করেনি। ভোটের মাধ্যমে খুলনার মানুষ যেমন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে বিজয়ী করেছেন, ঠিক গাজীপুরেও তাই করবেন। এ প্রসঙ্গে সিটি নির্বাচনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে এখনো প্রচারণা শুরু হয়নি। তাই এই মুহূর্তে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা দলকে গুছিয়ে নিচ্ছি। যেখানে ছোটখাটো সমস্যা ছিল সেগুলো নিরসন করছি।’ তিনি বলেন, ‘খুলনা সিটির চেয়ে গাজীপুরে ভোটার অনেক বেশি। তাই আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রচারণা চালাব না। অঞ্চলভিত্তিক প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব দেব। এ জন্য সিটিকে আটটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন—এমন আশা করতেই পারি।’ গাজীপুর সিটি নির্বাচন গত ১৫ মে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি রিটের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। আপিল করা হলে তা আগামী ২৬ জুন ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেয় আদালত। এতে করে এই এক মাস অতিরিক্ত সময় পায় প্রার্থীরা। গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেকটাই উজ্জীবিত। তারা মনে করছেন, রমজান মাস ও ঈদের কারণে এক মাস সময়ের মধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের মান-অভিমান ভেঙে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গাজীপুরে মেয়র পদে নৌকার বিজয়কে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এ ছাড়াও এই নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের আগে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সংসদ নির্বাচনের আগে জয়ের বিকল্প ভাবছেন তারা।

সর্বশেষ খবর