বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিবর্তন আসছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে

৮টি ধারায় আপত্তি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের
আইনটি করতে চাই সারা দেশের জন্য : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘আমরা যে আইনটা করতে চাই সেটা সারা দেশের জন্য করতে চাই। কোনো গোষ্ঠী বা পেশার জন্য আইন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’ এ সময় গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮টি ধারার ব্যাপারে আপত্তি জানান। ডিজিটাল নিরাপত্তা            বিল, ২০১৮ সম্পর্কে গতকাল জাতীয় সংসদে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সঙ্গে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে ৮টি ধারা বিশেষ করে ১৫, ২১, ২৫, ২৮, ২৯ ,৩১, ৩২ এবং ৪৩ নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। সেখানে যে কথাগুলো উঠে আসছে তা হলো— বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি ওই আইনের কিছু শব্দ সংজ্ঞায়িত করা উচিত।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু সেটা বলতে কী বুঝায়— এটি কিন্তু সাংবাদিকদের প্রস্তাবনায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে। এরকম আটটি ধারা নিয়ে এডিটরস কাউন্সিল, বিএফইউজে এবং অ্যাটকোর নেতৃবৃন্দর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যেসব শব্দ এই আইনের মধ্যে আনার প্রয়োজন সেগুলোর জন্য আমরা সুপারিশ করব।’ আনিসুল হক বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি এই আইনটি চূড়ান্ত করার পর আবার সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসা হবে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘৫৭ ধারা অপব্যবহার রোধে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের সেল থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত মামলা রুজু হবে না। এটা করার পরে ৫৭ ধারায় মামলা শতকরা ৯৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। এই আইনটা যখন হবে তখন নিশ্চয়ই ৫৭ ধারা বাতিল হবে।’

বৈঠক শেষে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’ ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮টি ধারার ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয় এমন দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, তারা সেগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন এবং গ্রহণ করেছেন।’ ‘আমরা আশা করছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আমূল পরিবর্তন আসবে। এই আইনের বড় একটি দুর্বলতা হচ্ছে সংজ্ঞার অস্পষ্টতা। এসব অস্পষ্টতা দূর করে কোন কোন বিষয় স্পষ্টীকরণের কথা বলা হয়েছে, আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।’ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আমরা দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করেছি, একটি হলো— এমন কোনো আইন প্রণয়ন না করা, যাতে সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয়, আরেকটি হচ্ছে— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয় এমন কোনো ধারা যাতে আইনে না থাকে।’ তিনি বলেন, এই আইনটি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের ব্যাপারে যাতে প্রেস কাউন্সিলকে যুক্ত করা হয় এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও গুপ্তচরবৃত্তিকে যাতে এক করে দেখা না হয়।’ অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) প্রেসিডেন্ট সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আইনের যেসব অসুবিধা রয়েছে এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সংসদীয় কমিটিসহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।’ টিভি চ্যানেল ‘একাত্তর’ এর প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করা বা গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচারে বাধাগ্রস্ত করা নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার নামে অনিয়ন্ত্রিত গুজব নির্ভর মিডিয়ার হাত থেকে মূল ধারার গণমাধ্যমকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘অনেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে উসকানি দিয়ে রামুর মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। সুতরাং এখানে ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতের সঙ্গে ধর্মীয় উসকানির বিষয়টিকেও যাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার অবমাননাকেও অপরাধের আওতায় আনার ব্যাপারে বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে।’ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট সবাই একমত হয়েছে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল অপরাধ দমন করার জন্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা বা সাংবাদিকদের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য এই আইন তৈরি করা হয়নি।’ মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘উভয় পক্ষ আজ একমত হয়েছে যে, এ ধরনের একটি আইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

 এই আইনের যে যে ক্ষেত্রে সংশোধন করা প্রয়োজন রয়েছে সেসব জায়গায় সংশোধন করা হবে। সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার বা বাধাগ্রস্ত করার ইচ্ছা নিয়ে এই আইন প্রণয়ন করা হয়নি।’ কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান (রিমন), কাজী ফিরোজ রশীদ, হোসনে আরা লুত্ফা ডালিয়া এবং বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর