বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকার জলাবদ্ধতা কমাতে ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার ১৩টি স্থানের জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য খাল খননসহ পানি নিষ্কাশন সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫৫০ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পে বাস্তবায়ন হলে মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শঙ্কর, জিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, দারুস সালাম, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করা হবে। এদিকে গতকাল অনুমোদিত ১৬টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্পে মোট ব্যয় ৯৬ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫২ হাজার ৬৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ৩২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৪৩ হাজার ২২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ১৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৪৪টি খাল, ১০টি বক্স কালভার্ট ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। যে কোনো স্থানের ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রাইমারি অবকাঠামো হচ্ছে খাল। এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে নিষ্কাশিত হয়। ঢাকা মহানগরীতে ৪৩টি প্রাকৃতিক খাল রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসার আওতায় রয়েছে ২৬টি খাল। এসব খালের অধিকাংশেরই স্থায়ী অবকাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির সময় পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে না। নগরীতে জলজটের সৃষ্টি হয়। এ বিবেচনায় ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বিদ্যমান খালগুলো খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা হবে। খাল খননসহ পানি নিষ্কাশন সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫৫০ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বর্তমানে দেশের সরকারি মালিকানায় ১৫টি চিনিকল রয়েছে। এগুলোর বার্ষিক গড় উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। চিনিকলগুলোয় চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে চিটাগুড়, প্রেসমাড ও ব্যাগাস উৎপাদিত হয়। এর ফলে পরিবেশ দূষণকারী তরল বর্জ্য নির্গত হয়, যা অপরিশোধিত অবস্থায় নিকটবর্তী জমি বা জলাশয়ে পড়ে এগুলোর স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট করছে। এ থেকে উত্তরণে চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে সরকার। এ জন্য সরকার প্রতিটি চিনিকলে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে একটি চিনিকলে শোধনাগার নির্মাণের পর এবার বাকি ১৪ চিনি কলে হবে এ শোধনাগার। ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এ লক্ষ্যে ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।  একনেকের অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্প— এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন এলাকা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের ‘রূপসা ৮০০ মে.ও. কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ প্রকল্প। বিদ্যুৎ বিভাগের ‘কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি (১ম সংশোধন)’ প্রকল্প। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল অ্যান্ড এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল, নোয়াখালী’ প্রকল্প। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্?-এর উন্নয়ন (১ম পর্যায়)’ প্রকল্প। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য কমিশন ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন’ প্রকল্প। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ’ প্রকল্প। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প (১৩ তলা ভবন)’ প্রকল্প। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন’ প্রকল্প। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। জননিরাপত্তা বিভাগের ‘পাঁচটি র‌্যাব কমপ্লেক্স ও একটি র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর