সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিলেটের পথে পথে ভাঙছে সড়ক, বাড়ছে দুর্ভোগ

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

খানাখন্দ আর ভাঙাচোরায় বেহাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পর থেকে ভৈরবের আগ পর্যন্ত নরসিংদী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর সড়কের ভঙ্গুর দশার ফলে বাড়ছে যাত্রীদুর্ভোগ। বিকল হচ্ছে যানবাহন। ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে সম্প্রতি বৃষ্টির ফলে মহাসড়কের ছোট-বড় খানাখন্দগুলো আরও বড় আকার ধারণ করছে। এর সঙ্গে সড়কের কোথাও কোথাও উঁচু টিলার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই হরহামেশাই দ্রুতগামী যানবাহনগুলো দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। ফলে সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। অন্যদিকে মাঝে মধ্যে মহাসড়ক সংস্কার করলেও সেখানে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ উঠেছে, সড়ক সংস্কারের নাম করে সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়। বিধি অনুযায়ী কাজ করা হয় না। আবার কোথাও কোথাও কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে নেওয়া হয়। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয় সড়ক। আর এসব রোধে এখনই কোনো ব্যবস্থা নয় বলে জানিয়েছে নরসিংদী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। তবে মহাসড়ককে যান চলাচলের উপযোগী রাখতে বর্ষার মৌসুম শেষে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী। সরেজমিন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জ সীমান্তবর্তী কান্দাইল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিস্তর ছোট ছোট গর্ত। নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড, দড়িকান্দি, চারাবাগ, মরজাল, গাবতলী, চৈতন্যা, চৈতন্যা আবদুল্লাহ পোলট্রি ফিড, সৃষ্টিগড়, শ্রীফুলিয়া, কুন্দারপাড়া, ইটাখোলা, ভেলানগর, সাহেপ্রতাব, পাঁচদোনার চৈতাব, শেখেরচর বাবুর হাট, মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, বাগবাড়ী, পুরিন্দা ও কান্দাইল, পাঁচরুখী এলাকায় খানাখন্দ চোখে পড়ার মতো। আবার কোনো কোনো স্থানে সড়কের পিচ উঠে উঁচু টিলার মতো হয়ে গেছে। আর এসব স্থানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এ জন্য সাধারণ মানুষ সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দায়ী করছে। কথা হয় বাসচালক রাজীব খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মনের কষ্ট কার কাছে বলব ভাই। সব চোরের দল। বড় বড় নেতা আর বড় বড় গাতা (গর্ত) এক কথা। তারা যদি সঠিকভাবে কাজ করত তাহলে রাস্তার এমন অবস্থা হতো না।’ অপর চালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গেল পাঁচ বছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভালো মানের কোনো মেইনটেনেন্স করেছে এমনটা চোখে পড়েনি। মাঝে মধ্যে খানাখন্দ ও গর্তের মধ্যে ছেপ-লেপ দেয়। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তা মুখস্থ তাই খানাখন্দ আসার আগেই ব্রেক করে ফেলি। তবে রাতের বেলা গাড়ি চালানো এই রোডে সবচেয়ে ঝুঁকি।’ চৈতন্যা সড়কের পাশে দোকানদার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সড়কের পাশে উঁচু টিলা হয়ে আছে। এখানে গাড়ি আইসাই উইল্টা যায়। পরশু রাতের বেলায় এক ট্রাক সড়কের খানাখন্দ আর টিলায় পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ব্রেক ফেল হয়ে গাড়ি আমার দোকানের ওপর চলে আসে।’ চালক মনো মিয়া বলেন, ‘গর্তের কারণে গাড়ির সকেট জাম্পার, পাতি, স্প্রিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।’ অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, নানা অনিয়মে ভরপুর নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এখানে টেন্ডার হয়। বিল হয়। কিন্তু শতভাগ কাজ হয় না। কোনো কোনো সময় কাজ না করে বিল তুলে নেয়। সরকারি কর্মকর্তা-ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট যোগসাজশ করে সরকারি অর্থ লোপাট করছে। তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না। নানা অনিয়মের কথা অস্বীকার করে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অঞ্চলের রাস্তাটি সবচেয়ে ভালো। কিছু খানাখন্দ থাকলেও বড় কোনো সমস্যা নেই। এরপরও বর্ষা মৌসুম শেষ হলে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাস্তায় উঁচু টিলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা টেকনিক্যাল প্রবলেম। অতিরিক্ত লোড নিয়ে যানবাহন চলাচল করলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে এসব দ্রুতই মেরামত করা হবে।

সর্বশেষ খবর