সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

উত্তরাঞ্চলে ভোগান্তি, বগুড়ার ১৬ কিলোমিটার বেহাল

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে বেহাল থাকায় মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে। সড়কজুড়ে ছোট-বড় গর্তের কারণে মাঝেমধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, সড়ক মহাসড়কে বেপরোয়া যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি খানাখন্দ ও অপরিকল্পিত বাঁকের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়ক ভালো। যেটুকু বৃষ্টির কারণে খারাপ হয়ে আছে সেটিও মেরামত শুরু হয়েছে। ৮ জুন থেকে জেলার সড়ক মহাসড়কে কোনো গর্ত থাকবে না বলে দাবি করা হয়েছে। জানা যায়, বগুড়ার সীমানা সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে গাইবান্ধার কাছে রহবল পর্যন্ত বৃষ্টিতে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। গর্তের মধ্যে যানবাহনের চাকা পড়ে দুর্ঘটনার পাশাপাশি বিকল হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দূরের যাত্রীদের মহাসড়কে ভোগান্তি বাড়ছে। বগুড়ার মাটিডালি থেকে মোকামতলা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে অসংখ্য স্থানে গর্ত। কোনো কোনো স্থানে পিচ-পাথর উঠে গেলে সেখানে ইট দিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে আবার বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া, গোকুল এলাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব গর্তে জমে থাকা পানি বিপজ্জনক হয়ে মহাসড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলা সংযোগ সড়ক বেহাল হয়ে আছে প্রায় তিন বছর ধরে। একটু বৃষ্টি হলেই এ সড়কে পানি জমে রাস্তার মানচিত্র বদলে যায়। জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দবাইশা সড়কও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ চলাচল করলেও গর্তগুলো মেরামত করা হয়নি। বগুড়ার শুরু সীমানা সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে শেষ সীমানা গাইবান্ধার কাছে রহবল পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়ে উত্তরের ১০ জেলার যানবাহন চলাচল করে থাকে। এই ৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে বেশির ভাগ স্থানেই গর্ত ও পিচ-পাথর উঠে গিয়ে রাস্তা বেহাল হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ দাবি করছে, ঈদ সামনে রেখে তারা সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন করছে। গর্তগুলো মেরামত করতে সওজের রিপিয়ারিং (সিল) কার্যক্রম চালু করেছে। পাঁচটি ট্রাকে করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বগুড়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বল সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন কর্মসূচি চালু রয়েছে। যেসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর তালিকা তৈরি করে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। জেলার ৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। এর চার কিলোমিটার মেরামত শেষ হওয়ার পথে। এ ছাড়া কাজ চলছে মোকামতলা থেকে  জয়পুরহাট জেলা সড়কের প্রথম ১৪ কিলোমিটার সংস্কারের। বগুড়া থেকে সান্তাহার সরু সড়কের ৪৩ কিলোমিটার রাস্তাটি ১৮ থেকে বর্ধিত করে ২৪ ফুটে নির্মাণ করা হচ্ছে। বগুড়া জেলা সদরের ঝোপগাড়ি থেকে ক্ষেতলাল উপজেলা সড়কের ২৫ কিলোমিটার রাস্তার গর্তগুলো রিপিয়ার শুরু হয়েছে। মোকামতলা থেকে সোনাতলা ভায়া সারিয়াকান্দি উপজেলার ৪০ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে প্রায় ১ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা। সেটির কাজও শুরু হয়েছে। বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের গোকুল এলাকায় ট্রাকচালক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বগুড়া অংশের মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। মহাসড়কের ওপর রাস্তাগুলোর বেশির ভাগ অংশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো ছোট-বড় হওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অতি সাবধানে চলাচল করতে হচ্ছে।’ সদরের বাঘোপাড়া এলাকার আলমাস, হোসেন আলীসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, বাঘোপাড়া এলাকায় মাঝেমধ্যেই সড়কে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। সড়কে ছোট-বড় গর্ত থাকায় দূরপাল্লার যানবাহনগুলো মাঝেমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। বগুড়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘জেলার বেশির ভাগ সড়কের অবস্থা বিগত দিনের চেয়ে বেশ ভালো। যে কয়েকটি স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে তা বৃষ্টিপাতের কারণে। সেসব স্থানে রিপিয়ার কাজ চলছে। জেলার ৬৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে যে ১৬ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত তা মেরামতের জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা দিয়ে মেরামত কাজ চলছে। ৮ জুনের মধ্যে মেরামত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। যদি আবাহাওয়া বিরূপ হয় সে ক্ষেত্রে ঈদের ছুটির পর কাজগুলো শেষ করা হবে। ঈদে বাড়িফেরত মানুষগুলোর যেন দুর্ভোগ না হয় সেদিকে নজর রেখেই সড়কের সংস্থার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

সর্বশেষ খবর