সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আশঙ্কা ঢাকা-টাঙ্গাইলে নাজুক দশায় খুলনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা ও মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও খানাখন্দে বেহাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট যেন নিত্যদিনের ঘটনা। বৃষ্টি আর চার লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এ মহাসড়কে এবার ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গসহ ২৬ জেলার দূরপাল্লার যাত্রী আর চালকদের মধ্যে। যদিও ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা ও মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ চলছে। এদিকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলার ৯২টি মহাসড়কসহ ১২২ মহাসড়কের যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করায় রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। ফলে এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল এমনিতে ধীরগতি সব সময়ই থাকে। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় বিকল হওয়া, ছোটখাটো দুর্ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এ ছাড়া গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় মহাসড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষকে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের কদিমধল্যা, পাকুল্যা, নাটিয়াপাড়া, করটিয়া, টাঙ্গাইল বাইপাস, ধেরুয়া চেকপোস্ট, ঘারিন্দা বাইপাস, রসুলপুর ও এলেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে চার লেনে উন্নীতকরনের কাজের জন্য একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। আর এসব কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এবার ঈদে এ যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকরা। টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কের নিরালা পরিবহনের চালক যুবরাজ বলেন, ‘রাস্তায় ফোর লেনের কাজ চলমান থাকার মহাসড়কের কিছু জায়গায় এক লেনে চলাচল করতে হয়। বিশেষ করে গোড়াই, পাকুল্লা, নাটিয়াপাড়া ও ঘারিন্দা বাইপাসে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়, ফলে যানজট লেগেই থাকে।’ এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী খায়রুন নাহার মমতা বলেন, ‘রাস্তা খানাখন্দে ভরা আর যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় প্রতিনিয়তই যানজটের কবলে পড়তে হয়। এতে করে আমাদের মতো নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়।’ টাঙ্গাইল পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। ঈদের সময় এই যানবাহনের সংখ্যা সাত-আট গুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া রাস্তায় বাড়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল। এবার ঈদের ঘরমুখো মানুষ যাতে শান্তিতে যানজটমুক্ত পরিবেশে ফিরতে পারে সে জন্য রাস্তায় ট্রাফিক, সার্জেন্ট ও আনসারসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জিকরুল হাসান বলেন, ‘ঈদে চার লেন প্রকল্পের কারণে যানজটের আশঙ্কা নেই। চার লেন প্রকল্পের প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৬টি সেতুর মধ্যে ২৪টি সেতু ঈদের আগেই চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চার লেনের নির্মাণাধীন কয়েকটি অংশে রাস্তাগুলোও ঈদের সময় খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ঈদের আগে ও পরে চার লেনের কাজ বন্ধ রাখা হবে, যাতে ঈদে চলাচলকারী মানুষের কোনো দুর্ভোগ না হয়।’ টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিমুল এহসান বলেন, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়ক সংস্কারসহ যানজট নিরসনে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানান টাঙ্গাইল সড়ক ভবনের এ নির্বাহী কর্মকর্তা। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত পুলিশসহ থাকবে মোবাইল টিম। দুর্ঘটনাকবলিত ও বিকল যানবাহন দ্রুত সরানোর জন্য রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষ যানজটমুক্ত পরিবেশে নিরাপদে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

নাজুক দশায় খুলনার সড়ক-মহাসড়ক : নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় খুলনার বেশ কিছু আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়ক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ও খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক সড়কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক যোগাযোগের এই করুণ অবস্থা। পরিবহন মালিক ও চালকরা ঈদের আগে জরুরি ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যস্ততম মহাসড়ক যশোর-খুলনা ও আঞ্চলিক সড়ক খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কের পুরোটাই চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়া আশাশুনি-গোয়ালডাংগা-পাইকগাছা সড়ক, কয়রা-নোয়াবাকি-শ্যামনগর ৯ কিলোমিটার সড়ক, কেশবপুর-বেতগ্রাম ৫ কিলোমিটার সড়ক, তেরখাদা-বর্ণাল-কালিয়া ৫ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল রহিম বক্স দুদু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, খুলনা-নওয়াপাড়া-যশোর ও যশোর-বেনাপোল সড়কের সবচেয়ে বাজে অবস্থা। কিছু কিছু জায়গায় সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু তা চলছে ধীরগতিতে। আগামী বর্ষার আগে এসব সড়ক সংস্কার করতে না পারলে দুর্ভোগ চরমে উঠবে। খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের বাসচালক মো. মনির হোসেন জানান, ভাঙা রাস্তার কারণে এ সড়কে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। বড় বড় খাদগুলোতে আটকে পড়ার কারণে অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ধীরগতিতে চলার কারণে সময় নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা ঝাঁকুনির ভয়ে বাস থেকে নেমে যেতে চান। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ প্রতিবছর ঈদের আগে খানা-খন্দ যে অংশগুলো প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সংস্কার করা হয়, সেগুলোই পরবর্তীতে আবার বৃষ্টির পানিতে খানা-খন্দে পরিণত হয়। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, খুলনায় সড়ক সংস্কারে অবহেলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাগুলো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে। আসন্ন ঈদে এ দুর্ভোগ আরও বাড়বে। জনদুর্ভোগ কমাতে ঈদের আগে সড়ক সংস্কারে দাবি জানান নিসচার এ নেতা। সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাশ বলেন, চার জেলা সড়কের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকে অচিরেই  অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর