শনিবার, ২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বন্দুকযুদ্ধ শেষে মৃত্যুদণ্ড

নিজামুল হক বিপুল

বন্দুকযুদ্ধ শেষে মৃত্যুদণ্ড

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়াটি এখন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। সেখান থেকে ফেরত এলেই এটি পাঠানো হবে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য। প্রস্তাবিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে (সংশোধিত) মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের জামিন-অযোগ্য এবং সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। একইভাবে হালের ভয়াবহ মাদক হিসেবে পরিচিত ইয়াবার বিষয়ে বলা হয়েছে, কারও কাছে ২ গ্রাম ইয়াবা পেলে সেই আসামি হবেন জামিন-অযোগ্য। এ ছাড়া ইয়াবাসহ পাঁচ প্রকার মাদককে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, এসব মাদকের সঙ্গে জড়িত আসামিরাও হবেন জামিন-অযোগ্য এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন সম্পর্কে এমন তথ্যই জানা গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে ভেটিংয়ের জন্য। প্রস্তাবিত আইনের ধারাগুলো সম্পর্কে ভেটিংয়ে কোনো আপত্তি না থাকলে তা মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। তবে কবে নাগাদ মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে তা নিশ্চিত করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অবশ্য তিনি নিশ্চিত করেছেন, প্রস্তাবিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানই রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনোরকম আপত্তি না থাকলে সেটিই বহাল থাকবে। ইতিমধ্যে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সারা দেশে এ অভিযান চলছে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকা ব্যবসায়ী ও বহনকারীদের চূড়ান্ত তালিকা ধরে চলছে এ অভিযান; যাতে মাদক ব্যবসায় সরাসরি জড়িত শতাধিক কারবারি নিহত হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে প্রণীত এবং সর্বশেষ ২০০৪ সালে সংশোধিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন নতুন করে সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারা দেশে মাদকের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদকের বিস্তার ঘটায় সরকার নতুন করে আইনটি সংশোধনের এ উদ্যোগ নেয়; যাতে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আইনটি সংশোধন করে প্রস্তাবিত খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে আইনের প্রস্তাবিত খসড়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই-বাছাই শেষে সম্প্রতি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এর আগে ৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সর্বশেষ সভায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইনটি সংশোধনে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; যা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে পুনর্গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন, ২০১৮-এর খসড়া তৈরি করার পর আরও মতামতের জন্য তা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। সবার মতামত পাওয়ার পর এটি যাচাই-বাছাই শেষে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, যদি কেউ মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করেন অথবা গডফাদার বা মূল হোতা হিসেবে প্রমাণিত হন, তাহলে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। মাদকের খুচরা বিক্রেতা বা ডিলারদের বিষয়টি প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় মাদক ব্যবসার গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ সংযোজন করা হয়েছে। আইনে এ ধারাটি সংযোজিত হলে গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের ব্যাংক লেনদেন বা দেশের বাইরে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা যাবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনেই সাজা কার্যকরের বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় মানি লন্ডারিংয়ের ধারাটি সংযুক্তির ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মাদক ব্যবসায়ী বা তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের ধারাটি প্রয়োগ করতে পারবে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গোপনে তদন্ত করা যাবে। মাদক কারবারির বিষয়ে গোপন তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অর্থ লেনদেনের চ্যানেল নিয়েও কাজ করতে পারবে অধিদফতর। প্রস্তাবিত আইনে একটি বড় বিষয় হচ্ছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে হালের সবচেয়ে ভয়াবহ মাদক ইয়াবার আইনগত নাম ‘অ্যামফিটামিন’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি হচ্ছে কোড নাম। এতে ইয়াবা ব্যবসায়ী বা অন্তরালের গডফাদারদের বিচার করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, কাউকে ৫ গ্রাম ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হলে বা তার হেফাজত থেকে ৫ গ্রাম ইয়াবা উদ্ধার হলে সর্বনিম্ন ছয় বছর ও সর্বোচ্চ ১৫ বছরের সাজা দেওয়া যাবে। অন্যান্য মাদকের বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, মাদকের পরিমাণ যদি অনূর্ধ্ব ১০০ গ্রাম হয়, সে ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তির সর্বনিম্ন শাস্তি এক বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর, একই সঙ্গে অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। যদি ১০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে ও ২০০ গ্রামের নিচে হয় তাহলে সর্বনিম্ন শাস্তি পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। আর মাদকের পরিমাণ যদি ২০০ গ্রামের বেশি হয় তাহলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় মাদকের শ্রেণি বিভাগ করে বলা হয়েছে— ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, আফিম ও কোকেন হচ্ছে ‘ক’ শ্রেণির মাদক। এসব মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আসামিরা জামিন-অযোগ্য হবেন এবং তাদের যাবজ্জীবন থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়।

সর্বশেষ খবর