ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার রথ বিশ্বকাপে ছুটছে সমান্তরালেই। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে দুই দল একই ফল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল। আগের দিন আর্জেন্টিনা ড্র করেছিল আইসল্যান্ডের সঙ্গে। পরের দিন ব্রাজিল ড্র করল সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে। এবার জয়ের বিকল্প নেই। ব্রাজিল সমর্থকরা জয় ছাড়া কিছু ভাবতেই চাইছে না। অগ্নিপরীক্ষার ম্যাচ। ড্র বা হারলেই বিদায় ঘণ্টা প্রায় বেজে যাবে। এ কারণেই সেন্ট পিটার্সবার্গ এখন তাদের দখলে। ফিনল্যান্ড উপসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম কিংবা নিয়েভা নদীর তীরের ফ্যান জোন সবখানেই হলুদ জার্সিধারীদের দাপট। আজ যে এই শহরেই নেইমাররা মুখোমুখি হচ্ছেন কোস্টারিকার! ব্রাজিলের বেইজ
ক্যাম্প সুদূর সোচিতে। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে প্রায় ২৪০০ কিলোমিটার দূরে। এতদূর থেকে উড়ে এসেছেন নেইমাররা রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী শহরে। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হওয়ার আগেই তারা অনুশীলন করতে এলেন। মার্সিডিজ বেঞ্জের বিশাল গাড়ি থেকে প্রথমেই নেমে এলেন মার্সেলো। গত ম্যাচে ব্রাজিলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। যেন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অনুশীলনে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই জানা গেল, অধিনায়ক বদলের ধারাটা বিশ্বকাপেও ধরে রাখছেন কোচ তিতে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে এসেছেন থিয়াগো সিলভাকে। আজকের ম্যাচে তার হাতেই থাকবে দলের পতাকা। পুরো ফুটবল দুনিয়ায় রটে গেছে, নেইমার ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারছেন না। তিনি আহত। কোস্টারিকার বিপক্ষে খেলবেন কিনা বলা কঠিন। কিন্তু ব্রাজিলের কোচ তিতে গতকাল সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘গত ম্যাচে যে দল ছিল এবারও তাই থাকছে। কোনো পরিবর্তন নেই।’ নেইমার থাকছেন দলে। ব্রাজিল সমর্থকরা এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। কোস্টারিকার বিপক্ষে ব্রাজিলের রয়েছে দারুণ অতীত। বিশ্বকাপ কিংবা বিশ্বকাপের বাইরে দেখা হলেই ব্রাজিল বার বার হারিয়েছে কোস্টারিকাকে। দুই দলের মোট দেখা হয়েছে দশবার। এর মধ্যে নয়বারই জিতেছে ব্রাজিল। হেরেছে একবার। কোস্টারিকার একমাত্র সেই জয়টা ছিল ১৯৬০ সালে, প্যান আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে। এই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই জানা আছে থিয়াগো সিলভাদের! তবে কোস্টারিকাকে কোনোভাবেই ছোট দল মনে করছেন না ব্রাজিলের আজকের ম্যাচের সেনাপতি। ‘এখানে প্রতিটা দলই কঠিন। সবাইকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রতিটা ম্যাচই ফাইনাল।’ থিয়াগো সিলভার চেয়ে ভালো আর কে জানেন বিষয়টা! গতবার তিনি যে মাঠের বাইরে বসে দেখেছিলেন ব্রাজিলের করুণ বিদায়! এবার নিশ্চয়ই সেই ভুলটাকে শোধরাতে চাইবেন! কোচ তিতের পরিকল্পনাটা সোজা। গত ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল সুইজারল্যান্ড। ইউরোপের অন্যতম সেরা দল। তাদের বিপক্ষে অনেকটাই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে তার দল। এবার আর কোনো বাধা নেই। ব্রাজিল তার চিরায়ত ফুটবলটা খেলতে পারে। ব্রাজিলের কোচ তিতে বললেন, ‘আমরা গত ম্যাচে কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছিলাম। তবে এই ম্যাচে আক্রমণাত্মক ফুটবলটাই খেলব।’ ব্রাজিলের সেই আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখতে সেন্ট পিটার্সবার্গে ভিড় জমিয়েছে সারা দুনিয়া থেকে আসা ফুটবল সমর্থকরা। রাশিয়ানরাও তো এই মাঠে ব্রাজিলের অপেক্ষাতেই ছিল। সেন্ট পিটার্সবার্গে এখন ফুটবল উৎসবটা শুরু হলো ঠিকভাবে। এত দিন এখানে কেবল রাশিয়ানদের উৎসব ছিল। এবার হলো বিশ্বকাপের উৎসব। সারা বিশ্বের উৎসব।
মিডিয়ার প্রবেশাধিকার ছিল না অনুশীলনে। তাই নেইমার সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। ব্রাজিলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য জানিয়েছে, ‘বুধবার দলের সঙ্গে অনুশীলনে ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন নেইমার।’ ব্রাজিলিয়ান শিবির সূত্র জানায়, শতভাগ সুস্থ হতে নেইমার সকালে দলের ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে অনেকটা সময় ব্যয় করেন। এরপর দুপুরে অনুশীলনে নামেন। সেখানে নিয়মিত ফ্রি কিক নেন। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টায় সেন্ট পিটার্সবার্গে কোস্টারিকার বিপক্ষে খেলতে নামবেন নেইমাররা। গতকালই সোচিতে অনুশীলন শেষে চলে এসেছেন পিটার্সবার্গে। মধ্য আমেরিকার দেশটির বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১০ বার খেলে ৯ বার জিতেছে ব্রাজিল। পরিসংখ্যানের বিচারে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বর দল ব্রাজিল আজ পরিষ্কারভাবেই ফেবারিট ২৩ নম্বর কোস্টারিকার বিপক্ষে।