শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুদ না কমালে কর ছাড় পাবে না ব্যাংক

----- এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদ না কমালে কর ছাড় পাবে না ব্যাংক

নতুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাতে করপোরেট কর কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কম সুদে ঋণ না দিলে সে সুবিধা তারা পাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গতকাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) এক সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হয়ে এসে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এমসিসিআই গতকাল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর এবং এমসিসিআইর ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন সাব-কমিটির সদস্য আদিব এইচ খান। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকগুলো ভাগ্যবান যে তাদের করহার কমানো হয়েছে। তবে লেন্ডিং রেট ঠিক না রাখলে ব্যাংকগুলো এই বেনিফিট পাবে না। ব্যাংকের সুদহারের সঙ্গে তাদের করপোরেট করের হার সরকার কীভাবে সমন্বয় করবে সে বিষয়ে অবশ্য স্পষ্ট কোনো ধারণা দেননি তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এখন তা কার্যকর করার অপেক্ষা।’ এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট ট্যাক্স নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বলা হচ্ছে আমরা ব্যাংকারদের সুবিধা দিয়েছি। প্রকৃত অর্থে তারা সৌভাগ্যক্রমে সুবিধা পেয়েছে। তবে সবার ক্ষেত্রে কমানো হলে অনেক রেভিনিউ (রাজস্ব) আদায় কম হতো। তাই কমানো সম্ভব হয়নি। আমরা তাদের করপোরেট করহার কমিয়েছি, যাতে তারা সুদের হার কমাতে পারে।’ তিনি বলেন, ব্যাংকের করপোরেট ট্যাক্স কমানোর মূল উদ্দেশ্য ঋণের সুদহার কমানো। এতে বিনিয়োগ বাড়বে। যদিও সুদহার কামানোর শর্ত আরোপ করা হয়নি। আলটিমেটলি এ শর্ত আরোপ করা হবে যে ঋণের সুদ না কমালে করপোরেট ট্যাক্সের সুবিধা দেওয়া হবে না। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এর আভাস আজই পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো সুদহার ঘোষণা করেছে। তারা নামিয়ে আনবে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সঞ্চয়পত্রকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। সঞ্চয়পত্রে সুদহারকে একটা রিজনেবল অবস্থায় আনা হবে। বেশি কমানো ঠিক হবে না। নিহাদ কবির বলেন, শুধু কিছু ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। অথচ অসংখ্য কোম্পানি রয়েছে, যাদের করহার কমানো হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রেও করহার কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ করহার কমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা লেভেল প্লেইং ফিল্ড মনে করা উচিত। আহসান এইচ মুনসুর বলেন, তিন কারণে লোকাল ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। এর একটি, ব্যাংকের ডিপোজিট গ্রোথ কমে গেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ ডিপোজিট গ্রোথ ছিল। চলতি অর্থবছর তা নেমেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে। হাই ননপারফরমিং লোন (এনপিএল) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি এ সংকটকে বাড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, বুধবার বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভার পর সংগঠনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেসব ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে ১৪ এপ্রিল বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ১২ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ঋণ বিতরণ করছে। আর আমানত সংগ্রহ করছে ৮ থেকে ১১ শতাংশ সুদে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন।

অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্স বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছেন। আর অনিবন্ধিত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্স বিদ্যমান ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন।

সর্বশেষ খবর