শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপি কর্মীরা আজ ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি কর্মীরা আজ ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন : ফখরুল

সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের বর্তমান দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুনের পর সাংবাদিক ভাইয়েরা যেমন ফল বিক্রি করে জীবন ধারণ করেছিলেন, তেমনি আজ আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। তারা হকার হয়েছেন, কেউ কেউ বাড়ির নাইটগার্ডের কাজ করেন। কেউ এলাকায় থাকতে পারছেন না, সবাই চলে এসেছেন যে যার মতো করে। এই ঢাকা শহরের এক পাড়ার লোক তার নিজের পাড়ায় থাকতে পারছেন না, অন্য পাড়ায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সারা দেশে আমাদের প্রায় ১৮ লাখ নেতা-কর্মী মামলার আসামি। দেশে এখন বাকশালের চেয়েও ভয়ঙ্কর শাসন চলছে। এ অবস্থার নিরসনে দেশ রক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ আয়োজিত ‘সংবাদপত্রের কালো দিবসের’ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সভায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজে সহসভাপতি মোদাব্বের হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বিএনপিকে বাদ দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। এ জন্যই আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের কথা বলছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, গত বুধবার ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে পারে। এই সরকারের আকার হবে ছোট। নির্বাচনের সময় সেই সরকার কেবল ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করবে। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কয়েকটি দল নিয়ে তারা নির্বাচন করতে চায় নিজেদের মতো করে। তিনি বলেন, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যেতে চায়। সেটা নির্বাচনের মতো হতে হবে। সরকারি দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন। সরকারি খরচে হেলিকপ্টারে চড়ে ঘুরে ঘুরে ভোট চাইবেন। আর বিরোধী দলকে কথা বলতে দেবেন না, ধরে ধরে জেলে দেবেন। সে ক্ষেত্রে তো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনে সমান মাঠ থাকতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সামাজিক সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানে একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির তাগিদ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তার আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তারও আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচনের মতো হতে হবে। যদিও বর্তমান সরকার চায়, বিএনপি নির্বাচনে না আসুক। অন্যান্য দল দু-একটা যা আছে তারাই থাকুক। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত রাতেও গাজীপুরের কাশিমপুরে আমাদের দলের ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ কারণে গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে সরানোর জন্য বলে আসছি আমরা। যেদিন আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিল আর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করল, জামায়াতের প্রার্থীসহ ৫৭ জনকে গ্রেফতার করল। আর হাই কোর্ট যেদিন নির্বাচন বন্ধ করল ওইদিন আমাদের আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ২১৩ জনের নামে মামলা দিল। এটা হলো আমাদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এটা হলো আমাদের সিইসি সাহেবের খুলনার মতো নির্বাচন না হওয়ার নমুনা। আমি জানি না, এই দেশ আওয়ামী লীগ সরকার চালাচ্ছে নাকি অন্য কেউ? দলীয় নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহাসচিব বলেন, হতাশাই শেষ কথা হতে পারে না। লড়াই করতে হবে, লড়াই করতে করতে আমরা একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবই ইনশা আল্লাহ। আমরা এই দেশে বাকশালও দেখেছি। মানুষ কিন্তু জেগে উঠেছে। এই বাংলাদেশের মানুষই কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ধ্বংস স্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে গেছে। আমাদেরকে সেভাবেই এগোতে হবে। নির্বাচন হবে, আমরা ক্ষমতায় যাব, এটা মনে করার কারণ নেই। আপনাকে আদায় করে নিতে হবে। সবসময় একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে একটা কথা বিশ্বাস করি, ‘হোয়েন দেয়ার ইজ ক্রাইসিস গো টু দ্য পিপল, লার্ন ফ্রম দেম’। তাদের কাছ থেকে জান, তারপর সেটাকে প্রয়োগের চেষ্টা কর। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশের সব জায়গায় যাব। মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করব।

সর্বশেষ খবর