শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

গাজীপুর নির্বাচনে অনিয়মে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

গাজীপুর নির্বাচনে অনিয়মে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম-জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের গ্রেফতার-হয়রানির খবরে তার দেশ উদ্বিগ্ন। ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগেই সরকার এসব বিষয়ের সমাধান করবে। কারণ জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে, তা বোঝার জন্য এসব স্থানীয় নির্বাচনই মূলত নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, গাজীপুরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ার বিষয়টি ‘খুবই উৎসাহব্যঞ্জক’। তবে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার যেসব অভিযোগ এসেছে, সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এসব অভিযোগের মধ্যে আছে ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়া, ভোটের দিন ও আগে পোলিং এজেন্ট এবং রাজনীতিসংশ্লিষ্টদের ভয়ভীতি দেখানো। তিনি বলেন, গাজীপুর নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের আটক করা হয়েছে অথবা তাদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন জনগণকে ভোট দিতে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে, অথবা বলা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার জন্য। অনেকে আবার ভোট দিতে গিয়ে দেখেছেন যে তাদের ভোট আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা তাদের সামনেই জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনের সপ্তাহে বিরোধী রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের যেভাবে পুলিশ হয়রানি ও গ্রেফতার করেছে, সে ব্যাপারেও আমরা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া শুধু এই নির্বাচনের আগেই নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে বিরোধী দলের মাঠ পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আটক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ, যেখানে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। বাংলাদেশ সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে— আমরা সেটাই দেখতে চাই। আর বাংলাদেশের মানুষকে তাদের এই মতপ্রকাশের অধিকার কেউ দেয়নি, তারা ১৯৭১ সালে এ অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয় ব্যাখ্যা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একই গণতান্ত্রিক নীতি ও ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ বিষয়টিই আমাদের এ দুই দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। আর ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। ওই স্থিতিশীলতা কেবল অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কিনা— তার সঙ্গে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের পরিকল্পনাকেও মিলিয়ে দেখছেন তিনি।

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শক্তিশালী গণমাধ্যম, শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিছিল-মিটিং করার অধিকার এবং সেই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশের ধারাবাহিক ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গার জীবন বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশের উদারতা, মানবতা ও স্নেহ এবং জনগণের ইতিহাসদৃঢ়তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সুরক্ষা ও জবাবদিহিতার নীতিকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে। তিনি জানান, নির্যাতিত মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া এবং নৃশংসতা ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ তাদের বন্ধু দেশ ও সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের সাহায্য এবং সুরক্ষা ও জবাবদিহিতার নীতি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। রাখাইন রাজ্যে শুরু হওয়া এ সংকটে সাড়া দেওয়া প্রথম দেশগুলোর একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, অবশ্যই মানবাধিকারের কিছু বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করছে। এ ক্ষেত্রে ‘মাদকের প্রধান হোতাদের’ ধরা এবং অবৈধ মাদক বাণিজ্যের জাল ধ্বংস করে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পরিস্থিতি এড়ানো এবং সঠিক উপায়ে কাজ করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরস্পরের কাছ থেকে শেখা এসব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। ডিক্যাবের ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময়ে সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ মিশু বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর