রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাপে আছে স্পেন

আসিফ ইকবাল

দুদেশের সীমানা দূরত্ব ৭ হাজার কিলোমিটার। মস্কো থেকে মাদ্রিদ পৌঁছাতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। এত দূরত্ব, তারপরও দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেয়ে রাজনৈতিক বিভাজন বেশি। বিভাজনের শুরু স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার থেকে। বিশ্বযুদ্ধের আগে স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিপক্ষে আমজনতার লড়াইয়ে সমর্থন জুুগিয়েছিল লেনিনের দেশ রাশিয়া। সেই শুরু শত্রুতার। বজায় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও। রাশিয়াসহ মিত্র বাহিনীর বিপক্ষে জার্মানিসহ অক্ষ শক্তিতে ছিল স্পেন। বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল জার্মানি। ফ্রাঙ্কোর পতন হয়েছিল মর্মান্তিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব শাসন শুরু করে রাশিয়া। দীর্ঘ আট দশকের রাজনৈতিক বৈরিতা এখনো বিদ্যমান দুদলের মাঝে। সেটা রাজনৈতিক মঞ্চে নয়। ফুটবল ময়দানে। দুদল আজ মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে। দীর্ঘ সময়ের বৈরিতা ভুলে কি শৈল্পিক ফুটবলে মেতে উঠবে দুদেশ? না, সেরা আটে জায়গা নিতে কল্পনাকে হার মানানো ফুটবল খেলবেন ইনিয়েস্তা, দিয়াগো কস্তা, ইসকো, সার্জিও রামোস ও চেরিশভরা। স্পেন ও রাশিয়ার সেই বৈরিতার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ১৯৬৪ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে। আসরের আয়োজক ছিল স্পেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেবারই প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন উপস্থিত হয়েছিল স্পেনে এবং ফাইনালে উঠেছিল। ফুটবল লড়াই আড়াল করতে পারেনি দুই দেশের রাজনৈতিক দূরত্বকে। স্পেন প্রথমবার ইউরো শিরোপা জিতেছিল রাশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে। মাঠের ওই লড়াইয়ে স্প্যানিশ সমর্থকরা দুঁয়ো দুঁয়ো করেছিল লেভ ইয়াসিনদের। ৮২ বছর পর আজ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে দুদল মুখোমুখি হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে। রাশিয়ার সমর্থকরা কি সেই বৈরিতা দেখাবেন ফিফার ‘ফেয়ার প্লে’ খেলার প্রতিশ্রুতিকে চাপা দিয়ে।

চলতি বিশ্বকাপে রাশিয়া অংশ নিয়েছে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে পেছনের দল হয়ে। অথচ প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবকে ৫-০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে মোহাম্মদ সালাহর মিসরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটি। অবশ্য গ্রুপের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে হেরে যায় ৩-০ গোলে। ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন প্রথম ম্যাচে টিকিটাকা ফুটবল খেলে ৩-৩ গোলে ড্র করে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানকে ১-০ গোলে এবং শেষ ম্যাচে মরক্কোর সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও ২০০৮ ও ২০১২ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা বড় ধাক্কা খায় আসর শুরুর আগে। রিয়াল মাদ্রিদ নতুন কোচ হিসেবে লোপেতেগুইয়ের নাম ঘোষণার পর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে স্পেন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তারা বহিষ্কার করে লোপেতেগুইয়েকে এবং দায়িত্ব তুলে দেয় ফার্নান্দো হিয়েরোকে। নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে স্পেন এখন দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্ন দেখছে। ১৫ জুলাই ফাইনালে খেলার আগে আজ রাশিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ে নামছে আসরের অন্যতম ফেবারিট দলটি। রাশিয়ার বিপক্ষে স্পেন কখনোই হারেনি। যদিও দুদেশের সর্বশেষ লড়াইটি ড্র হয়েছিল ৩-৩ গোলে। ৬ মুখোমুখিতে স্পেন জিতেছে চারবার এবং বাকি দুটি ড্র। গোল করেছে স্পেন ১২টি এবং রাশিয়া ৪টি। বিশ্বকাপে এই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে দুদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর