মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নেইমার ম্যাজিকে কোয়ার্টারে ব্রাজিল

ব্রাজিল ২ : ০ মেক্সিকো

নেইমার ম্যাজিকে কোয়ার্টারে ব্রাজিল

শেষ পর্যন্ত নেইমারের পায়েই এলো স্বপ্নের গোল। বাকিরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন —এএফপি

সাগরের রং হলুদ! সেই সাগরে ঢেউ উঠল। উথাল-পাতাল ঢেউয়ের মাথায় সোনালি রঙা ট্রফি। এদিক থেকে ওদিক দুলছে। সামারা অ্যারিনার গ্যালারি যেন হলুদের সাগর! এতক্ষণ নোঙর করে রাখা নৌকাগুলো ঢেউ ভেঙে ছুটতে লাগল। লক্ষ্য একটাই, ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা। লুকিয়ে রাখা বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকাগুলো উঁচু থেকে উঁচুতে তুলে ধরল ব্রাজিল সমর্থকরা। মেক্সিকোর জালে দুই গোল দেওয়ার পর নেইমারদের কাছে এর চেয়ে কম কিছু আর আশা করে না ব্রাজিলিয়ানরা। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এবার হেক্সা জয়ের জন্য প্রস্তুত। ২-০ গোলের জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত    করার পর নেইমাররা যেন তাই প্রমাণ করলেন। নেইমার খেলছেন। দেখাচ্ছেন ম্যাজিক। দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটে চলেছেন মেক্সিকোর গোলমুখে। ডিফেন্ডাররা সব পিছনে পড়ে আছে। তার শৈল্পিক ড্রিবলিংয়ে পা পিছলে যাচ্ছে প্রতিপক্ষের। মুখ থুবড়ে পড়ছে মাটিতে। তাকে রুখবে কে? তিনি খেলছেন, খেলাচ্ছেন। গোল করছেন, করাচ্ছেন। এভাবে খেলতে দেখে কে ভাবতে পারে, কয়েক মাস আগেই ছুরির নিচে ছিল নেইমারের পা! নড়তে গেলেই কাতরে উঠতেন তিনি! এখনো কী পুরোপুরি সেরে উঠেছেন নেইমার? একটু আঘাত পেলেই মাটিতে গড়াগড়ি যান। কিন্তু হেক্সার জন্য সব মুখ বুজে সহ্য করছেন। একটা বিশ্বকাপ শিরোপার যে কী নাম-ধাম, তা তো বেশ ভালোই জানেন তিনি। ব্রাজিলের সমর্থকরা অদ্ভুত কৌশলী। তারা কটিনহোকে নিয়ে গান গায় সমস্বরে। পলিনহোকে নিয়েও গায়। মার্সেলো এবং জেসুসকে নিয়েও তারা নতুন নতুন সুর রচনা করে। কিন্তু নেইমারের জন্য কোনো গান নেই। কেন! ব্রাজিলের রাজধানী থেকে আসা সমর্থক স্টেফানিয়া বলল, ওকে আমরা চাপমুক্ত রাখতে চাই। আমরা জানি, তার নামে শোর উঠলে সে ঘাবড়ে যেতে পারে। সত্যিই তো! অদ্ভুত একটা যোগসূত্র আছে ব্রাজিলের দলটার সঙ্গে সমর্থকদের। সবাই মিলেই যেন এবার রাশিয়া থেকে শিরোপা নিয়ে বাড়ি ফিরবে। নেইমারের নামে জয়ধ্বনি দেওয়ার সুযোগ সে সময় অনেক পাওয়া যাবে। ব্রাজিলিয়ানদের এই চিন্তার সঙ্গে সত্যিই একমত হতে হয়। নেইমার যে কী দুরন্ত ফুটবল খেলেছেন গতকাল, বর্ণনা করা কঠিন। তার দুরন্তপনায় ব্রাজিল কঠিনতম ম্যাচটা জিতল অনেকটা হেসে-খেলে। ফুটবলটা এমনো প্রাণবন্ত হতে পারে, ব্রাজিল-মেক্সিকো প্রমাণ করল। কখনো ব্রাজিল, কখনো মেক্সিকো। কখনো সবুজ রঙা মেক্সিকানরা স্তব্ধ হয়ে যায় ব্রাজিলের আক্রমণ দেখে। উল্লাসে ফেটে পড়ে সাম্বা নাচের দেশ। কখনো মেক্সিকানদের প্রচণ্ড চিৎকারের নিচে চাপা পড়ে ব্রাজিলের ‘ওলে, ওলে’ কোরাস। সমর্থকদের এই উল্লাস কিন্তু এমনিতেই নয়। মাঠের লড়াইটাই পথ দেখাচ্ছিল। থিয়াগো সিলভা আর কটিনহোর পা হয়ে নেইমারের পা বল স্পর্শ করতেই গর্জে ওঠে হলুদ জার্সিধারীরা। অন্যদিকে রাফায়েল মারকুয়েজ আর গুয়ার্দাদোর পা হয়ে হার্নান্দেজের পায়ে বল ঠেকলেই মেক্সিকোর উল্লাস শুরু হয়। দুই দলের উৎসবের এই ধারাটা প্রথমার্ধে বয়ে চলেছে সমানতালে। কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি। মেক্সিকো প্রথমার্ধের দারুণ এই খেলাটা দ্বিতীয়ার্ধে আর ধরে রাখতে পারল না। ব্রাজিলের ভয়ঙ্কর আক্রমণগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল মেক্সিকোর ডিফেন্স লাইন। ধ্বংস করে দিল সাজানো সবকিছু। ইস্পাতের মতো এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা দেয়ালটা ভেঙে পড়তেই স্পষ্ট হয়ে গেল মেক্সিকোর ফাঁকফোকর। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অধিনায়ক রাফায়েল মারকুয়েজকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন কোচ হুয়ান কার্লোস ওসোরিও। বদলি হিসেবে নামেন মিডফিল্ডার মিগুয়েল। ডিফেন্সে শক্তি কমিয়ে কী ভুলটা করলেন ওসোরিও তা বুঝলেন কিছুক্ষণ পরই। ম্যাচের ৫১তম মিনিটে উইলিয়ান ভয়ঙ্করভাবে বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করে মেক্সিকোর ডিফেন্স লাইন ভেঙে দেন। তার ক্রস থেকেই বল পেয়ে আলতো ছোঁয়ায় গোলটা করেন নেইমার। ব্রাজিল সমর্থকরা জয়ের উৎসবটা করে নিল সঙ্গে সঙ্গেই। সমস্বরে ‘ব্রাজিল ওলে, ওলে, ওলে’ গাইল। সমানতালে নাচল। বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা হাতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। ম্যাচের শেষ মিনিটে নেইমারের ক্রসে ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোল করেন কটিনহোর বদলি নামা ফিরমিনো। এবার আর কোনো বাধ মানল না ব্রাজিলিয়ানরা। জয়ের উৎসবে মেতে উঠল। অতিরিক্ত ছয়টা মিনিট হেসে-খেলেই পার করে দিলেন নেইমাররা। মেক্সিকো দুরন্ত সাহসে ভর করে মাঠে দল নামাল ৪-৩-৩ ফরমেশনে। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার কৌশলটা ছিল দুঃসাহসের পরিচয়। এ যেন ব্রাজিলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া, এসো লড়াই করি মাঝ মাঠে! কটিনহো, পলিনহো, উইলিয়ান আর কাসেমিরোদের মতো মিডফিল্ডারের বিপরীতে মেক্সিকোর গুয়ার্দাদো আর গ্যালার্দোকে কেইবা সমান ভাবতে পারে! মেক্সিকো ম্যাচের আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে টানা দশবার অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছে ব্রাজিল। এ ম্যাচগুলোতে ৩৫টা গোল করেছে সিলেকাওরা। গোল হজম করেছে মাত্র ৪টা! বিশ্বকাপে এখন ব্রাজিলই সর্বোচ্চ গোলদাতা দল (২২৮টি)। এ রেকর্ডগুলো নিয়ে ভাববার খুব একটা সময় নেই ব্রাজিলের। তারা কেবল ছয় নম্বর ট্রফিটার দিকেই তাকিয়ে আছে অধীর আগ্রহে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর