মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশ্ব চার সংস্থার প্রধান

শুনলেন নির্যাতনের কথা, করলেন বাংলাদেশের প্রশংসা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

শুনলেন নির্যাতনের কথা, করলেন বাংলাদেশের প্রশংসা

ক্যাম্পে গতকাল রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ছবি : টুইটার

বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা চার শীর্ষ সংস্থার প্রধান গতকাল একসঙ্গে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফিলিপপো গ্রান্ডি ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরা একসঙ্গে ঘুরেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প। শুনেছেন মিয়ানমারে তাদের ধর্ষিত, নির্যাতিত ও লুণ্ঠিত হওয়ার বর্ণনা। প্রশংসা করেছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার।

শনিবার রাতে ঢাকা পৌঁছানো জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের এক বিশেষ ফ্লাইটে করে তাঁরা কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। তখন কক্সবাজারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই বিমানবন্দর থেকে দুই অতিথিকে নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজারের অভিজাত হোটেল সায়মান বিচ রিসোর্টে। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁদের ব্রিফিং করেন। সকাল সাড়ে নয়টার পরপরই তাঁরা হোটেল থেকে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পের  উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে পৌঁছে তাঁরা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে নতুন বর্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ক্যাম্প-৪ পরিদর্শন করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা যান ইউএনএফপিএ পরিচালিত মহিলাবান্ধব ক্যাম্পে এবং ১০-১৫ রোহিঙ্গা নারীর কাছ থেকে শোনেন মিয়ানমারের নির্যাতনের বর্ণনা। এরপর ডি-৪ ক্যাম্পে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম পরিচালিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে ডি-৫ ক্যাম্পে গিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীদের কাছ থেকে নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাঁদের ওপর চলা নির্যাতন ও ধর্ষণের দায়ে সেখানকার সেনাসদস্যদের বিচার দাবি করেছেন।

শরণার্থীদের বক্তব্য ও তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র দেখার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হত্যা আর ধর্ষণের যে বিবরণ আমি শুনেছি, সেটা অকল্পনীয়। তারা এ ঘটনার ন্যায়বিচার চায় এবং সেখানে ফিরে যেতে চায়।’ বিকালে হোটেলে ফিরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সভা করে সাড়ে ৫টার দিকে ফেসবুক লাইভে সংযুক্ত হন। ফেসবুক লাইভে গুতেরেস বলেন, সীমান্ত খুলে দিয়ে বাংলাদেশ যে ভূমিকা নিয়েছে তা শুধু প্রশংসারই নয়। এটি থেকে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেরই শিক্ষা নেওয়ার বিষয় আছে। কারণ ইউরোপের অনেক দেশকে আমরা দেখি মাত্র কয়েকজন শরণার্থী নিয়েই গেট বন্ধ করে দিতে, সেখানে বাংলাদেশ লাখে লাখে শরণার্থী নিয়েছে। একই অনুষ্ঠানে জিম ইয়ং কিম বলেন, রোহিঙ্গারা বাঁচতে চায়। তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায়। রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ একসঙ্গে একে অপরের সঙ্গে কাজ করবে। এরপরই ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ত্যাগ করেন। সন্ধ্যায় ঢাকার রেডিসন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। উপস্থিত ছিলেন ইউএনএইচসিআর ও রেডক্রসের প্রধানরাও। রাত ১১টায় তারা সফর শেষ করে ঢাকা ত্যাগ করেন।  গত বছরের ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার মুখে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এর আগে বিভিন্ন সময় সে দেশের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা আরও চার লাখের মতো রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রোহিঙ্গা সংকটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করলেও নানা জটিলতায় বিষয়টি এগোয়নি।

সর্বশেষ খবর