মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

উৎসবে ভাসছে রাশিয়া, শোকে স্তব্ধ স্পেন

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সামারা থেকে

লোকটার চেহারা দেখলেই বুঝা যায়, খুব করে মদ পান করেছে। জড়িয়ে আসছে গলার স্বর। রাস্তায় দেখা হতেই টেনে টেনে রা-শি-য়া, চ্যা-ম্পি-য়-ন বলে হাই ফাইভ করল। জড়িয়ে ধরল। ছবি তুলল। এরপর আরও একজন। এভাবে চলতেই থাকল। এক সময় রাস্তার সামনে যাওয়াই মুশকিল হলো। মাতাল রাশিয়ানদের উদযাপনের ভিড়ে হারিয়ে যেতে হলো। ওদিকে স্পেনে এখন শোকের নিস্তব্ধতা। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দলটির বিদায় যেন মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকরা।

রাশিয়ানদের উৎসবের একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে। তারা খুব আয়োজন করে মদ নিয়ে বসে। পান করতে করতে এক সময় ভুলেই যায় কেন তারা উদযাপন করতে শুরু করেছিল। এটা এক বাংলাদেশি রাশিয়ানের কাছ থেকে শোনা। এতদিন কোনো প্রমাণ ছিল না। গত রবিবার রাতে এর প্রমাণ পাওয়া গেল। রাশিয়ানরা মাতাল হলো। সারা রাত তারা বাইরে কাটাল। বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াল রাস্তায় রাস্তায়। গাড়ি নিয়ে তুফান গতিতে লং ড্রাইভে চলে গেল। এমন উৎসব তো রাশানরা করবেই। রবিবার ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রাশিয়া। এরচেয়ে মধুর সংবাদ আর কী হতে পারে রাশানদের জন্য! মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে হাজার মাইল দূরে সামারাতেও তাই উৎসবের রাত। রাশিয়ায় ফুটবলের চেয়ে হকির কদর অনেক বেশি। অনেকে তাই জানে না, ফুটবলটার মাহাত্ম্য! অন্তত এতদিন জানত না। বিশ্বকাপ শুরু হতেই রাশানরা বুঝল, ফুটবল অন্য খেলা। এ খেলার জগতটা পুরোপুরিই আলাদা। এখানে সুদূর মেক্সিকো থেকে আসা এক তরুণী পরম আপন হয়ে যায় একজন এশিয়ানের। এখানে বর্ণের বাধা-ধরা নিয়মটা বদলে যায়। গোত্র পরিচয়টাও আর থাকে না। সবাই হয়ে উঠে এক। সামারায় বিরাট এলাকা জুড়ে ফ্যানজোন। কিন্তু গত রবিবার বিরাট এই এলাকাকেও খুব ছোট্ট বলে মনে হলো। সামারার সবচেয়ে বিখ্যাত অপেরা এবং ব্যালে থিয়েটারের পাশেই ফ্যানজোন। রাত ১২টাতেও এখানে লোকে লোকারণ্য। রাশান তরুণ-তরুণীরা গোল হয়ে হাতে মদের বোতল নিয়ে বসেছে। কাউকে পাশে দেখলেই নিমন্ত্রণ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানায়। ফ্যানজোনের বিভিন্ন স্থানে বাজছে রাশান ফোক সং। ঢোল-বাদ্যের তালে তালে নাচছে জোড়ায় জোড়ায়। এ এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের উৎসব। স্পেনকে হারিয়ে রাশানরা এতটাই উদ্বেলিত হয়ে পড়ে, তাদেরকে থামানোই দায় হয়ে যায়। পুলিশ এসে বার বার অনুরোধ করলেও ওরা বাড়ি ফিরল না। স্থানীয় সময় ভোরটায় হোটেলে ফেরার পথেও দেখা মিলেছে প্রচুর রাশানের। যারা উৎসব করছে। একদল ব্রাজিলীয় সমর্থকের পথ আগলে মাতাল রাশানরা দাবি জানাল, বল বন্ধু, রাশিয়া চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিলীয়রা এসেছে সাওপাওলো থেকে। সঙ্গে আছে তার স্ত্রী আর বন্ধুরা। ব্রাজিলীয়রা বলেন, রাশিয়া গুড। তোমরা জিতেছ। অভিনন্দন। রাশান তাকে ছাড়বেই না। অবশেষে ব্রাজিলীয় সমর্থকদের ছোট্ট দলটা মাতাল রাশানের আবেদন মিটিয়ে ছাড়পত্র পেল। সামারা অনেক ছোট্ট শহর। সেই তুলনায় মস্কো বিশাল। রেড স্কয়ারের পরিধিও অনেক। সামারাতেই যদি এমন উৎসব করে রাশানরা, মস্কোতে কী হয়েছে! অনুমান করা যায়। সেখানে হয়ত কনসার্ট হয়েছে। সারাটা রাত রঙিন করে রেখেছে রাশানরা! এই রাশিয়া যদি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন সত্যিই হতে পারে, অবাক হওয়ার কিছু আর থাকবে কী! এটাতো ‘অঘটনের বিশ্বকাপ’ নাম ধারণ করেছে আরও আগেই! জার্মানিকে বিদায় করে। আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল আর স্পেনের বিদায় তো সেই নামকরণকেই স্বার্থক করে তুলেছে! এই বিশ্বকাপে আরও কত কী যে হবে!

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর