রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

আক্রমণই দুই কোচের কৌশল

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মস্কো থেকে

ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমের সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আজ জিতলেই স্থান পাবেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পাশে। অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব আছে কেবল জার্মান তারকা বেকেনবাওয়ারেরই।

অন্যদিকে ফুটবলার হিসেবে খুব একটা নাম করতে না পারলেও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়তে পারেন ক্রোয়েশিয়ার জ্লাতকো দালিচ। ফাইনালিস্ট দুটো দলই দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে বিশ্বকাপজুড়ে। দুটো দলেরই কৌশল ছিল আক্রমণাত্মক। তবে এর মধ্যেও কিছুটা সূক্ষ্ম পার্থক্য ছিল। যেমন ক্রোয়েশিয়া ম্যাচজুড়ে পরিশ্রম করে খেলে না। ওরা হঠাৎ কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রবল আক্রমণে যায়। এর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক ফুটবলটাই খেলতে থাকে। এমনকি গোল হজম করেও তারা ধীর-স্থির থাকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই পদ্ধতিতে খেলেই সফল হয়েছে তারা। অন্যদিকে ফরাসিরা যখন তখন কাউন্টার আক্রমণে যেতে পছন্দ করে। সুযোগ পেলেই গোল করে এগিয়ে যেতে চায়। দুটো দলের কৌশল আক্রমণাত্মক ফুটবল হলেও কিছুটা পার্থক্য রয়ে যায়। ফ্রান্স দলের আক্রমণভাগে খেলবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, অলিভিয়ের গিরদ এবং মাতুইদি। মিডফিল্ড থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান, পল পগবা, এনগুলো কান্তেরা। ডিফেন্স থেকেও মাঝে-মধ্যে উঠে আসবেন স্যামুয়েল উমতিতি এবং রাফায়েল ভারানেরা। দুর্দান্ত এই দলকে নিয়ে বেশ কয়েকটা পরিকল্পনা করেন দেশম। আজও নিশ্চয়ই পরিকল্পনায় কোনো কমতি রাখবেন না। প্রয়োজন মতো সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে পারেন। পল পগবাকে মাঝে-মধ্যেই তিনি নামিয়ে দেন নিচে। উপরে উঠিয়ে নেন উমতিতিকে। ফরাসি দলের এই পরিবর্তিত রূপ সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টিই রাখতে হবে ক্রোয়েশিয়ান কোচ দালিচকে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচের পরিকল্পনায় আছে আক্রমণ আর আক্রমণ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই ম্যাচটা জয়ের জন্য জীবনবাজি রেখেই খেলতে নামব।’ ফ্রান্স-বেলজিয়াম ম্যাচটা অনেক সুন্দরভাবেই শেষ হয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে বেশকিছু সংঘর্ষ দেখেছিল দর্শক। এমন সংঘর্ষ ফাইনালেও দেখা যেতে পারে। দুটো দলই মরিয়া হয়ে খেলবে।

জয়ের জন্য লড়াই করবে। ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালটাও সাংঘর্ষিক হয়েছিল। দালিচ অবশ্য মুখে যাই বলুন, ক্রোয়েশিয়ার স্বাভাবিক খেলাটা পরিবর্তন করবেন কি না বোঝা মুশকিল। ধীর-স্থিরভাবে খেলতে খেলতে হঠাৎ তাল পরিবর্তন করাই তো ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলের সৌন্দর্য। তবে শুরু থেকে আক্রমণে গেলেও যেতে পারে তারা। মারিও মানজুকিচ পেরিসিচকে সামনে রেখে খেলতে নামে ক্রোয়াটরা। মাঝ মাঠে আছেন অধিনায়ক লুকা মডরিচ, ইভান রাকিতিচ, আন্তে রেবিচরা। ডিফেন্সটা সুসংহত দিয়ান লভরেন, সিমে আর ভিডাদের নিয়ে। ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই দলটার প্রায় সবাই অনেক বড় বড় ম্যাচের চাপ সামলে অভ্যস্ত। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছেন এই দলে। অন্যদিকে বড় ম্যাচের চাপ সামলাতে অভ্যস্ত তারকা খুব বেশি নেই ফ্রান্সের। অবশ্য গত ইউরো ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে ফ্রান্সের। দুটো দলই প্রতিটা পজিশনে দারুণ সব ফুটবলাদের নিয়ে দল গড়বে। ফাইনালটা সত্যিই দেখার মতো হবে। তবে একটা ইতিহাস মনে রাখলে ক্রোয়েশিয়াকেই এগিয়ে রাখতে হয়। ২০০২ সালের পর নির্ধারিত সময়ে কোনো ফাইনাল খেলাই শেষ হয়নি। ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হয়েছে অতিরিক্ত মিনিটে। এবারও তা হতে পারে। গত তিন ম্যাচে অতিরিক্ত মিনিটে খেলে অভ্যস্ত ক্রোয়েশিয়া মানসিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে ফরাসিদের চেয়ে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর