সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা-মামলা আর হয়রানির পাল্টাপাল্টি অভিযোগে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেটের নির্বাচনী পরিবেশ। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাতে ঘরে ঘুমাতে পারছেন না বলে অভিযোগ আছে। পুণ্যভূমি সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতিও ভেঙে পড়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আর দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে হাতাহাতির সূত্র ধরে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও নগরীতে শোডাউন করেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ জুলাই নগরীর আম্বরখানা এলাকায় যুবলীগ ও শিবির কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাধ্যমে সিলেটের নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এরপর সুবিদবাজারে আওয়ামী লীগ নেতার রেস্টুরেন্টে শিবির কর্মীদের সশস্ত্র হামলা, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থক দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হাতাহাতির ঘটনার পর অনেকটা উগ্র মনোভাব নিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীদের শোডাউনের ঘটনাগুলো সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতিতে ফাটল ধরিয়েছে।
গত কয়েক দিনে পৃথক তিনটি মামলায় বিএনপির ১৩৪ নেতা-কর্মীকে আসামি করার পর থেকেই সিলেট নগরীতে বিএনপির রাজনীতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এর আগ পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরিফুল হকের প্রচার কার্যক্রমে বেশ সরব থাকলেও মামলার পর তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। গ্রেফতার এড়াতে অর্ধশত নেতা-কর্মী এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকায় চলে গেছেন। কেউ কেউ সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকার আশপাশে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশিরভাগ নেতা-কর্মীই এখন আর রাতে নিজের বাড়িতে থাকতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি প্রার্থী আরিফ।শুক্রবার বিএনপির দুই কর্মী রাসেল ও সুমনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শনিবার নগরীর উপশহরের উপপুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন আরিফ। এই ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে রবিবার বিএনপির ১০০ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই দুই মামলায় এরই মধ্যে বিএনপি নেতারা হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। এ ছাড়া শনিবার রাতে নগরীর টুলটিকরে কামরানের একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩৪ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদ আহমদ। এসব মামলায় এরই মধ্যে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাতে আরিফের ঘনিষ্ঠজন জুরেজ আবদুল্লাহ গুলজারকে হাওয়াপাড়ার তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ছেলে রুম্মন রাজ্জাককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাঈদ আহমদ, কর্মী এনামুল হক, রাসেল আহমদ ও লিয়াকতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চালিবন্দর এলাকার নবীন ভোটার দিব্য জ্যোতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রচার-প্রচারণার শুরুতে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। এখন সেই উৎসব নেই। কাউন্সিলর প্রার্থীরা মারামারি করছে। জীবনের প্রথম ভোটটা দিতে পারব কি-না, এখন সেটাই ভাবছি।
নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, নির্বাচন কমিশন সত্যিকারের রেফারির ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়ায় উত্তেজনা বাড়ছে। এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারলে সামনে পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি প্রার্থী যেসব অভিযোগ করছে বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। প্রথম থেকে এখনো পর্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সিলেটের নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে। ভোটের দিনেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশই বজায় থাকবে।
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।