বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

কারাগারে খালেদার ১৬৫ দিন

প্রশ্ন বিএনপির ঢাউস কমিটির পারফরম্যান্স নিয়ে

মাহমুদ আজহার

কারাগারে খালেদার ১৬৫ দিন

সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিএনপির সর্বশেষ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয় গত রবিবার। রুদ্ধদার এ বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদের পুরস্কৃত না করলে এবং যারা ওই সময় মাঠে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের তিরস্কৃত না করলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন কখনোই সফল হবে না।’ তার এ বক্তব্যে সমর্থন দিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রায় সব নেতাই। ওই বৈঠকে পর্যায়ক্রমে নেতাদের সবার বক্তব্যেই উঠে আসে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, খালেদাবিহীন নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না। বৈঠকের পর এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঘরোয়া সভা-সমাবেশ কিংবা সংবাদ সম্মেলনে সবাই গর্জন করেন। বৈঠকে অনেক পরিকল্পনাও হয়। বাস্তবে উল্টো পথে চলে বিএনপি। প্রভাবশালী নেতারাও বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য স্বেচ্ছায় কারাবরণের কথাও বলেন। বাস্তবে রাজপথে সবাই ‘কাগুজে বাঘ’। দীর্ঘ ১৬৫ দিন ধরে কারাগারে তিয়ত্তোরোর্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো নির্জন কারাগারে একমাত্র বন্দী হিসেবে রোগে-শোকে দিন কাটছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। তার মুক্তি দাবিতে কয়েকদফায় বিএনপি রাজপথের সাদামাটা কর্মসূচি দিলেও এখন আর কোনো কিছুতেই নেই দলটি। সর্বশেষ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বিশাল শোডাউন করে বিএনপি। এটাই বিএনপির সর্বোচ্চ কর্মসূচি। সেখানে নেতাদের বক্তব্যে ছিল বেশ তর্জন-গর্জন লক্ষ্য করা যায়। এরপর আর এখন কোনো কর্মসূচিতে নেই। সবার চোখ এখন তিন সিটি নির্বাচনের দিকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিষয়টি যেহেতু রাজনৈতিক, তাই রাজপথেই আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমরা শক্ত কর্মসূচির কথা চিন্তা-ভাবনা করছি। সময়মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ২০১৬ সালে কাউন্সিলের পর দলের কেন্দ্রীয় ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটিকে ‘ঢাউস’ আকারে করা হয়েছিল আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে রেখে। এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয় অন্তত ৮০ জনকে। একইভাবে ঢাকা মহানগর দুই শাখার কমিটি, অঙ্গ সংগঠন সবই ঢাউস করার নির্দেশনা দেওয়া হয় একই কারণে। বাস্তবে ঢাউস কমিটি, পারফরমেন্স খুবই নগণ্য।

জানা যায়, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে মাঠপর্যায়ের নেতারা ‘কঠোর’ কর্মসূচি চাইলেও বিএনপির নীতি নির্ধারকরা ধীরে চলো নীতিতেই এগুচ্ছেন। তাদের বক্তব্য হলো, বেগম জিয়াই কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাছাড়া সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ সময় কঠোর কর্মসূচির দিকে গেলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা-হামলায় জর্জরিত হওয়ার আশঙ্কার পক্ষেও যুক্তি তুলে ধরছেন সিনিয়র নেতারা। তাদের টার্গেট জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগ মুহূর্তে আন্দোলন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যৌথসভায় কেউ কেউ শক্ত আন্দোলনের পরামর্শ দেন। হরতাল-অবরোধসহ সহিংস কর্মসূচি ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না বলেও ওইসব নেতারা অভিমত দেন। তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের বড় একটি অংশই শান্তিপূর্ণ ধারায়ই আরও আরও কিছুদিন সাদামাটা কর্মসূচির কথা বলেন। বিএনপির মধ্য সারির এক নেতা জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচন আর বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিকে ঘিরেই সারাদেশে সংগঠনগুলোর কমিটির কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো গোছানোই এখন টার্গেট বিএনপির। আরেক নেতা অবশ্য এও বলেন, ঈদের আগে এসব কমিটিকে ঘিরে ‘কমিটি বাণিজ্য’ও হবে প্রভাবশালী একটি শ্রেণির। তাদের জন্য দল গোছানোর নামে কমিটি বাণিজ্য আশীর্বাদও।  দলীয় সূত্র জানায়, গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার পর হতে কয়েকদফায় সাদামাটা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর মধ্যে ছিল— সভা, সমাবেশ, দোয়া মাহফিল, মানববন্ধন, অবস্থান, লিফলেট বিতরণ, স্মারকলিপি প্রদান ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ। দলের  কোনো  কোনো  নেতা বলছেন, সরকারের নির্বাচনকেন্দ্রিক মেরুকরণই আন্দোলনের নতুন মাত্রা তৈরি করবে। আর তারা ওই পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছেন। বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তার মুক্তি দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতেও হাতে নিয়েছিল বিএনপি। ওই সময় গণস্বাড়্গর কর্মসূচি উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, চেয়ারপারসন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত্ম এ কর্মসূচি চলবে। সপ্তাহখানেক এ কর্মসূচি ঠিকঠাকমতোই চলছিল। এরপর আর খবর নেই। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে কতজন সাক্ষর করলো তাও জানেন না কেউ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ছাড়া আমরা জাতীয় নির্বাচনে যাব না। আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তি মিলবেও না। শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘নেত্রী জেলে আর আমরা বাইরে, এটা ভাবতেও কষ্ট হয়। প্রতিকূল পরিবেশ আছে এটাও সত্য। কিন্তু নেত্রীর মুক্তি ছাড়া এখন আর কিছুই আমাদের ভাবনা নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর