বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

কয়লা লুটের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তিরা। গতকাল  বিকালে খনি দুর্নীতির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে দুর্নীতি তদন্ত করে প্রতিবেদন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় পেট্রোবাংলা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, জ্বালানি সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ ও পেট্রোবালা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফায়জুল্লাহ এনডিসি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কয়লাখনিতে দুর্নীতির ঘটনা উদ্ঘাটনের পর সোমবার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি সচিব এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

দুর্নীতির সঙ্গে কয়লাখনির সবাই জড়িত : বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল পেট্রোবাংলা গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে কয়লা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন কেউই কয়লার হিসাব রাখেনি, তখন সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। পরে প্রতিমন্ত্রী প্রতিবেদনটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে বের হয়ে যান।

মামলা ১৯ জনের বিরুদ্ধে : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কয়লা গায়েবের ঘটনায় খনির বিদায়ী এমডিসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর থানায় মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খনির পক্ষে পার্বতীপুর থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান। অভিযোগে মজুদ কয়লার হিসাবের গরমিলের বিষয়টি দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং ৪০৯ ধারা অনুযায়ী এজাহারভুক্ত করে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। মামলা নম্বর ৩০। পার্বতীপুর থানার ওসি (তদন্ত) ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি দুদকের আওতাধীন হওয়ায় তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হচ্ছে।’ অভিযোগে বলা হয়েছে, খনির বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নূর-উজ-জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) এ কে এম খালেদুল ইসলামসহ খনির ব্যবস্থাপনায় জড়িত অপর আসামিরা ওই কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িত। বাকি ১৫ আসামির প্রত্যেকেই ব্যবস্থাপক, উপব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা। অভিযোগে জানানো হয়, খনি উন্নয়নের সময় ২০০১ থেকে ১৯ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদিত কয়লা থেকে পার্শ্ববর্তী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৯ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ, বেসরকারি ক্রেতাদের কাছে ডিওর মাধ্যমে ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন বিক্রি এবং খনির বয়লারে ১২ হাজার ৮৮ দশমিক ২৭ মেট্রিক টন কয়লা ব্যবহার করা হয়।

কয়লার উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার হিসাব করলে ১৯ জুলাই কোল ইয়ার্ডে রেকর্ডভিত্তিক কয়লার মজুদ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন। কিন্তু বাস্তবে মজুদ ছিল প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন কয়লা। অর্থাৎ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন কয়লা ঘাটতি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা বলে জানানো হয়।

অভিযোগে বলা হয়, এ ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ আসামি অনেক আগে থেকেই তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সংঘটিত কয়লা চুরির ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অনুমিত হয়।

উল্লেখ্য, দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বেনজীর আহমেদ সোমবার বিকালে সংস্থাটির পাঁচ সদস্যের দল নিয়ে খনি এলাকা পরিদর্শন করার পর জানান, কয়লাখনির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতার আলামত মিলেছে। ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহূত কয়লা থাকত খনির ইয়ার্ডেই। কিন্তু হঠাৎ কয়লা সংকট দেখা দেওয়ায় ১৫ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন।

এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ১৯ জুলাই খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নূর-উজ-জামান চৌধুরী এবং উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) এ কে এম খালেদুল ইসলামকে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পেট্রোবাংলা। বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিনকে সরিয়ে আনা হয়েছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দফতরে। বিদায়ী কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কাশেম প্রধানিয়াকে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর