বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
হিসাব-নিকাশ রাজশাহী বরিশালেও

উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ, হতাশ বিএনপি

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল সিটি নির্বাচন ঘিরে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উজ্জীবিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। শুধু বরিশাল নগরীই নয়, সিটি নির্বাচন ঘিরে আশপাশের জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরাও উজ্জীবিত। সোমবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে সিটি নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর আনন্দের জোয়ার বইছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাঝে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামী দিনগুলোতে আসন পাকা করতে নানা পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। অপরদিকে বরিশাল নগরীতে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে বিএনপি। ‘বিএনপির ঘাঁটি’ বলে পরিচিত বরিশালে ‘নৌকার’ কাছে বিশাল ব্যবধানে ধানের শীষের পরাজয়ে হতাশ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। যে কোনো পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েও ভোটের দিন সকাল ১০টার মধ্যে বিএনপির ভোট বর্জনের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং তাদের দুর্বলতা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর অনেকটা নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায় নগর আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ত্রী মর্যাদার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির বড় ছেলে সাদিক আবদুল্লাহর। নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেলেও সবার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন সাদিক। তার কারণেই তারুণ্যের জয়জয়কার মহানগর আওয়ামী লীগের। নতুন কমিটির নেতৃত্বে অনন্য উচ্চতায় আসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় ঐক্য, সাংগঠনিক শক্তি, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন এবং বিরোধী দল বিএনপির ব্যর্থতার কারণেই বরিশালে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে বলে মনে করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। তার মতে, মজিবর রহমান সরোয়ার নিজে সিটি নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন না। এ কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও আন্তরিকতা নিয়ে তার পক্ষে কাজ করেনি। নেতা-কর্মীদের আন্তরিকতা না থাকায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েও সরোয়ারের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণায় বিএনপির দৈন্যতা প্রকাশ পেয়েছে। অ্যাডভোকেট দুলাল বলেন, সিটি নির্বাচনের ফল বলছে, ‘বরিশাল এখন আর বিএনপি নয়, পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে’।  এদিকে সিটি নির্বাচনের ফল দেখে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বরং ভোট কারচুপির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। বরিশাল সিটির চেয়ে কলঙ্কিত নির্বাচন আর হয় না বলে দাবি সরোয়ারের। তিনি বলেন, বিএনপি আর মজিবর রহমান সরোয়ারকে ভয় পায় বলেই আওয়ামী লীগ প্রশাসনের ওপর ভর করে ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত নির্বাচন করেছে। বাইরের হাজার হাজার লোক এনে বরিশালের মানুষের ভোট ডাকাতি করেছে। সুযোগ পেলে জনগণ এর জবাব কঠোরভাবে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সরোয়ার বলেন, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে স্বচ্ছ-সুন্দর-সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ পরিবেশে আওয়ামী লীগ নির্বাচন দিয়ে দেখুক জনগণ তাদের কীভাবে প্রত্যাখ্যান করে। শুধু বিএনপি নয়, ৬ প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘটনা বাংলাদেশে বিরল বলে দাবি তার। সরোয়ার বলেন, নির্বাচনের ৩/৪ দিন আগে থেকে ক্ষমতাসীনদের ইশারায় নগরীর ৩ থানায় ৪টি নতুন চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে বিএনপির ৩৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া আড়াই থেকে ৩শ বিএনপি নেতা-কর্মীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ গ্রেফতার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে নেতা-কর্মীরা আত্মগোপন করে। এই সুযোগে ক্ষমতাসীনরা ভোট ডাকাতি করেছে। এরপরও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর সদর রোডের বিক্ষোভ মিছিল এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেছে বিএনপি। যারা বলে বিএনপি মাঠে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি, তাদের উদ্দেশে সরোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বিএনপির নামে মামলা দেয় কেন, তারা প্রচার মিছিলে হামলা করে কেন, তারা বিএনপির গণসংযোগ আটকিয়ে রাখে কেন, দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেয় কেন?  এদিকে বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, সিটি নির্বাচনের যে ফলাফল হয়েছে, তাতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এই সিটি নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য একটা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সর্বশেষ খবর