বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাঁদে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও সৃষ্টি হলো : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁদে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও সৃষ্টি হলো : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগে চাঁদের দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। এখন চাঁদের দেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। আমরা স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করেছি। রকেটটা যথাস্থানে ফিরে এসেছে। আমরাও একদিনে স্পেসে চলে যেতে পারব, আমরাও একদিন জয় করব। চাঁদের দেশে পৌঁছে যেতে পারব। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীপুত্র এবং তাঁর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গাজীপুর ও বেতবুনিয়াতে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র (স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন) স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাউন্ড স্টেশন দুটির নামকরণ করা হয়েছে সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র গাজীপুর এবং সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বেতবুনিয়া।  ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও দলীয় জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারছি এবং আমাদের সন্তানরা মহাকাশ বিজ্ঞান, পরমাণু প্রযুক্তি, সমুদ্র বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্র, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে— যা দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন।  তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের বেতবুনিয়াতে এই উপগ্রহ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি দিয়ে গেছেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর পরামর্শ এবং উদ্যোগে আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই সেই মুজিব থেকে সজীব— সেখানেই আমরা পৌঁছেছি। তিনি বলেন, আমরা পরমাণু বিদ্যুেকন্দ্র করছি, পরমাণু বিজ্ঞানী আমাদের প্রয়োজন। সমুদ্র গবেষণা করছি, সমুদ্র বিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষার সুযোগ হবে।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের বিনামূল্যে সাবমেরিক কেবলে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়ে ঠেলা নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, বাংলাদেশে কম্পিউটার শিক্ষা-কম্পিউটার ব্যবহার করা, সেই সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে সেবা দেওয়া, ইন্টারনেট সার্ভিস সমগ্র বাংলাদেশে করে দেওয়া, এটাতে বিএনপির আপত্তি ছিল। তাতে নাকি সব তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। তাই যখন আমাদের এই অঞ্চলে সাবমেরিন কেবল বিনা পয়সায় পাওয়ার সুযোগ ছিল, সেটা তারা গ্রহণ করেনি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা এর উদ্যোগ নেই।

১৬ কোটি মানুষের ৯ কোটি এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষাটা আমরাই প্রথমবার শুরু করেছিলাম, মানুষের কাছে কীভাবে নিয়ে যাব। এখন বলতে পারি, সেটা আমরা করতে পেরেছি, ভবিষ্যতে আরও চাহিদা বাড়বে। নিজের কম্পিউটার শিক্ষা ও টাইপ করার বিষয়টিও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে কম্পিউটার চালানো শিখেছি। আর বাংলা টাইপ এখন যিনি মন্ত্রী সেই মোস্তাফা জব্বাবের কাছ থেকে শিখেছিলাম। তবে এখন বাংলা টাইপটা আর পারি না। প্রধানমন্ত্রী হয়েই এই ক্ষতিটা হয়েছে। ’৯৬ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হলাম আমি ফাইল সই করতে করতেই সময় যায়। কম্পিউটারে স্পিড আর নেই। ভালো স্পিড ছিল এক সময়। নিজের লেখা নিজেই লিখতে পারতাম এক সময়। এখন আর হয় না। জানি না কবে ছুটি পাব, আবার শুরু করব। কিছু কিছু করতে পারি, সংশোধন করতে পারি, কিন্তু আগের মতো বাংলা টাইপটা হয় না। ইংরেজিটা কিছু পারি, অল্প। বাংলা টাইপটা ভুলে গেছি।

 

শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। দোয়া করবেন যাতে দেশ ও জাতির সেবায় আমরা সবসময় নিয়োজিত থাকতে পারি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের সেবায় কাজ করে। জনগণের সেবায় কাজ করে যাবে। জনগণের কল্যাণই আমাদের একমাত্র চিন্তা। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার সক্ষমতা। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার প্রায় ৩৬ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গের সমপরিমাণ। অর্থাৎ ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে পাওয়া যাবে প্রায় এক হাজার ৪৪০ মেগাহার্টজ পরিমাণ বেতার তরঙ্গ। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আর ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে। ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি হচ্ছে কেইউ ব্যান্ডের এবং ১৪টি সি ব্যান্ডের। গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

সর্বশেষ খবর