বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোনা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে যা বললেন মুহিত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেলেঙ্কারির পর ভল্টের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তা সম্বন্ধে আমি ইতিমধ্যে অবহিত হতে চেষ্টা করেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, এই বিষয় নিয়ে বড় কোনো হৈচৈ-এর কারণ নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি মোটামুটি ভালো।’  মুহিত প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে আরও জানান, ‘৯৬৩ কেজি ওজনের সোনা আমাদের ভল্টে মজুত আছে। তার মধ্যে প্রশ্নবোধক মান হলো মাত্র ৩ কেজি চাকতি ও রিং নিয়ে। তাই বিষয়টি তেমন একটা বিরাট কিছু নয়।’ সোনা কেলেঙ্কারির ঘটনা যখন গণমাধ্যমে আসে তখন দেশে ছিলেন না অর্থমন্ত্রী। দেশে ফিরে ২৪ জুলাই ডিসি সম্মেলনে তিনি প্রথম এ বিষয়ে মুখ খোলেন। সেদিনের মন্তব্যে তিনি উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমালোচনা করে বলেন, সোনা নিয়ে অনর্থক আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা নিয়ে এনবিআরের কোনো কথা বলারই প্রয়োজন ছিল না।  পরদিন ২৫ জুলাই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান অর্থমন্ত্রী।  চিঠিতে মুহিত বলেন, ‘পরশ্রীকাতরতা আমাদের বিশেষত্ব হলেও সচরাচর আমরা মানুষের ভালো দিকটি দেখি, অযাচিতভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই। তবে সমস্যা হলো কালো প্রলেপযুক্ত দুই টুকরা তথাকথিত সোনার গোলাকার চাকতি ও রিং নিয়ে।’ ২২ ক্যারেটের সোনা ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিল, তারা সোনার গুণাগুণ বিচার করেন প্রচলিত পদ্ধতিতে কষ্টিপাথর দিয়ে। আর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ সেটি যাচাই করেছে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বায়ুশূন্য একটি যন্ত্রের সাহায্যে। ফলে সোনার মানে হেরফের হয়েছে।

এ বিষয়ে মুহিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ‘ছয়জন কর্মকর্তা জব্দ করা সোনা সব পরীক্ষা করেন। ছয়জনের মধ্যে স্বর্ণকারই আমাদের সচরাচর এক্সপার্ট এবং তার কষ্টিপাথরে পরীক্ষা করা সোনা সব বিচারে যথেষ্ট।’ ভল্টের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সিসিটিভি চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৩৮টি। সব সময় ৬ স্তরভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। ৭০ জন পুলিশ ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করছেন। তবে এতকিছুর পরও নিরাপত্তা সচেতনতা জাতিগতভাবে (বাংলাদেশের মানুষের) একটু কম বলেই অর্থমন্ত্রী মনে করেন এবং এ বিষয়টিও তিনি প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন।

একটি জাতীয় দৈনিকে গত ১৭ জুলাই ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখার পর তা মিশ্র বা সংকর ধাতু হয়ে যায়। এ ছাড়া ২২ ক্যারেটের সোনা ১৮ ক্যারেট হয়ে গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থার করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে ওই সংবাদ প্রকাশের পরপরই বিষয়টি লুফে নেন সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। তারা সভা-সেমিনারে বিষয়টি নিয়ে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেন। পাশাপাশি রিজার্ভ কেলেঙ্কারির সমাধান না হতেই আবার সোনা কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। ওইদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ভল্টে রাখা সোনায় কোনো হেরফের হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ভাষ্য মেনে নেয়নি শুল্ক গোয়েন্দারা। পরে ২৩ জুলাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর