পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিকদের ‘অঘোষিত ধর্মঘটে’ গতকালও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল সারা দেশ। বিআরটিসির মাত্র কয়েকটি বাস ছাড়া রাজধানীতে চলাচল করেনি কোনো ধরনের গণপরিবহন। ফলে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন ঢাকার সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষ সাত দিনেরও বেশি সময় চলা এ ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ। শুধু রাজধানীর অভ্যন্তরে নয়, ঢাকা থেকে দেশের জেলাগুলোর উদ্দেশে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। কোনো জেলা থেকে রাজধানীতেও আসেনি কোনো বাস। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, নিরাপত্তা না থাকায় তারা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় থাকলেও গণপরিবহন ছিল না। একেবারে স্বল্পসংখ্যক বিআরটিসি বাস থাকলেও তাতে ওঠার কোনো উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা প্রাইভেট কার, বাইকে চেপে গন্তব্যে রওনা হন। বাস না পেয়ে নগরবাসীকে গন্তব্যে যেতে রিকশা, অটোরিকশায় দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় এসব পরিবহনও সহজে পাওয়া যায়নি। সকাল ১০টায় ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাইভেট কারসহ ব্যক্তিগত বাহন চলাচল করলেও যাতায়াতের জন্য কোনো বাস নেই। রিকশা ও সিএনজি পাওয়াও ছিল দায়। দুপুর ১২টায় বিশ্বরোড এলাকায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশত যাত্রী পরিবহনের জন্য অপেক্ষায়। ঘণ্টাখানেক ধরে এখানে অপেক্ষায় থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা সজীব বলেন, অফিসের কাজে উত্তরা থেকে মতিঝিলে গিয়েছিলাম ট্রেনে, কিন্তু ফেরার সময় রিকশায় ও পায়ে হেঁটে ফিরতে হয়েছে। মহাখালী থেকে হেঁটে বিশ্বরোড পৌঁছানো সজীব কথা বলতে বলতেই দৌড়ে উঠে পড়লেন চলন্ত একটি পিকআপে। শুধু সজীব নয়, ডজনখানেক মানুষ এয়ারপোর্টমুখী এই পিকআপের পেছন পেছন দৌড়াতে থাকেন এবং একপর্যায়ে উঠে পড়েন। পরে ঢাকার ফার্মগেট, মহাখালী, উত্তরা ঘুরে বিভিন্ন পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেখা গেছে। রাস্তার প্রতিটি মোড়েই অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে লোকজনকে। অবশ্য ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব এবং নীলক্ষেত এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ হওয়ায় এসব এলাকায় ব্যক্তিগত বাহনও বন্ধ ছিল বিভিন্ন সময়। গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এরপর বৃহস্পতিবার অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এর আগের রাতে দূরপাল্লার যানবাহন চললেও শনিবার রাত থেকে তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবহন মালিকরা বলছেন, গাড়ি ভাঙচুরের কারণে নিরাপত্তা না থাকায় চালকরা বাস চালাতে চাচ্ছেন না। গতকাল সকালে রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, এখন বাহন বলতে শুধু রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে চার-পাঁচগুণ বেশি। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
খুলনা : নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিপরীতে সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ফলে খুলনা থেকে গতকাল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালগামী দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এদিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, শিববাড়ী ও রয়্যাল মোড় কাউন্টারগুলোতে ‘কন্ডিশনে’ টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদি ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়, তাহলে বাস চলবে- এই বলে শর্তে যাত্রীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বাস না চললে পরে ওই টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির বিপরীতে ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অঘোষিত’ গণপরিবহন ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল দিনভর সাধারণ মানুষকে অন্তহীন ভোগান্তির মধ্যে সময় পার করতে হয়েছে। ব্যাঘাত ঘটেছে দৈনন্দিন কাজে। গণপরিবহন সংকটের কারণে নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, ২ নম্বর গেট, কালুরঘাট, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট, কাজীর দেউড়ি, অক্সিজেন মোড়, শাহ আমানত সেতু, মোহরা রাস্তার মাথা, অলংকার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। বরিশাল : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপরীতে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে গতকালও ঢাকাসহ সারা দেশের দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। তবে অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
আজ থেকে সারা দেশে দূরপাল্লার বাস চলবে : আজ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দূরপাল্লার বাস চলবে। গতকাল রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, সোমবার সকাল থেকে সারা দেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল করবে। বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল করবে।