মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
উৎকণ্ঠা কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা চান সুষ্ঠু পরিবেশ

বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি

বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি— বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলেছে, দেশের যানবাহন পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত যানবাহন নামেনি। এতে জনগণকে যেমন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তেমনি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন— বিজিএমইএ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি ও মোহাম্মদ নাসির। চলমান ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাস দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও মিমের মর্মান্তিকভাবে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দুষ্কৃতকারীরা হামলা করেছে, তার জন্য আমরা দুঃখিত। এই হামলার নিন্দা জানাই। তবে হামলার কারণে ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ ব্যবসা হয়, ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। ফলে রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা ব্যবসায় আঘাত হানবে না। লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ছাত্ররা ঘরে ফিরে গেলেও যানবাহন পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত যানবাহন নামেনি। ফলে, জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প। গত ১ সপ্তাহে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে ঠিকমতো পোশাক শিল্পের আমদানি ও রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারিনি। বন্দরে কনটেইনার ভর্তি রপ্তানি পণ্য পড়ে আছে আর জাহাজীকরণের অপেক্ষায় কারখানায় পড়ে আছে তৈরি পণ্য। এ অবস্থায় যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অনেক কারখানা স্টকলটের শিকার হবে। অনেক কারখানা এয়ার ফ্রেইট করতে বাধ্য হবে। আর এর মাশুল দিতে হবে পোশাক শিল্পকে। আমরা যখন অ্যাকোর্ড ও অ্যালায়েন্সের সব শর্ত পূরণ করে নিজেদের মতো করে চলার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আমাদের পিছিয়ে দেয়। ক্রেতাদেরও আস্থাহানি ঘটে। শিল্পের ভাবমূর্তি ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড চাই না, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত ও স্থবির করে দেয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করে, ব্যবসা-বাণিজ্য পিছিয়ে দেয়। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য এখনো অনেক কিছু করতে হবে। এর জন্য কঠোর আইন যেমন দরকার, এর যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, যাত্রী-চালক সবাইকে সচেতন হওয়া এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দ্বারা যানবাহন চালনা বন্ধ করতে হবে। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া পূরণে ইতিমধ্যে দৃশ্যমান নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশা করব এগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। কারণ নিরাপদ সড়কের দাবি বিজিএমইএরও। আমরা চাই না সড়ক দুর্ঘটনায় একটি প্রাণও ঝরে পড়ুক। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি চলতে থাকলে তৈরি পোশাক খাতকে পিছিয়ে দেবে। এতে রপ্তানিকারকরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন এবং ক্রেতাদের আস্থার সংকট তৈরি হয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে। ব্যবসা-বাণিজ্য পিছিয়ে দেয়। ফলে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যার প্রভাব পড়ে রপ্তানি আয়ে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও। এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক খাতের মতো বড় একটি খাতের সার্বিক তথ্য পেতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। ফলে টাকার অঙ্কে এ  পরিসংখ্যান তুলে ধরা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। আর রপ্তানি আদেশ বাতিল সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন-চারটি কারখানা এমন তথ্য আমাদের দিয়েছে। তবে রপ্তানি বাতিল হয়নি। রপ্তানি অর্ডারের জন্য তারা বাংলাদেশে ভ্রমণ স্থগিত করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলায় দেশটির বাজারে পোশাক রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করেন। যেখানে লাভালাভের বিষয় জড়িত সেখানেই ব্যবসায়ীরা পা বাড়ান। ফলে এতে রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমরা আশা করি— এমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়— দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাই জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও দেশের ব্যবসা বাণিজ্য অব্যাহত রাখার বিষয়ে সবার সহযোগিতা চায় বিজিএমইএ।

সর্বশেষ খবর