মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাংবাদিকদের ওপর ফের হামলা

সম্পাদক পরিষদের উদ্ব্বেগ প্রতিবাদ বিভিন্ন সংগঠনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত কয়েক দিন ধরে সাংবাদিকদের ওপর নির্বিচারে হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছে। এমন কি হামলাকারীদের লাঞ্ছনা হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না নারী সাংবাদিকরাও। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।  গত শনি, রবিবার ও গতকাল রাজধানীর জিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ মোড়, রামপুরা ও উত্তরা এলাকায় সাংবাদিকদের ওপর পৃথক হামলার ঘটনা ঘটে। 

গতকালও রাজধানীর রামপুরার আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক নাসরিন আকতারকে হেনস্তা করা হয়। এ সময় পুলিশের কয়েকজন নারী সদস্য নাসরিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে জানা গেছে।

সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর ও ছবি সংগ্রহ করার সময় সংবাদকর্মীদের ওপর নির্বিচার হামলায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। সেক্রেটারি জেনারেল মাহফুজ আনাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, পুলিশের উপস্থিতিতে লাঠি হাতে তেড়ে আসা ব্যক্তিদের হাতে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের অন্তত দুই ডজন ফটোসাংবাদিক ও রিপোর্টার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এদের মধ্যে এপির একজন ফটোসাংবাদিক ও একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারও রয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সংবাদকর্মীদের রক্ষায় পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখেনি বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনের সহিংস বিরোধীরা দায়িত্বরত আরও বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীর ক্যামেরা ও ভিডিও সরঞ্জাম ভেঙে ফেলেছে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে বলে পরিষদ জানিয়েছে। মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সাংবিধানিক নিশ্চয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, গণমাধ্যম মুক্তভাবে কাজ না করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিজেদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এ সময় হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারায় অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে অংশ নেন প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিক। মানববন্ধনে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, গত কয়েক দিনের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ১২ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। আমরা এসব ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আন্দোলনে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়া ৩০ জনের নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে তাদের নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত পৃথক মানববন্ধনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে আইন, বিচার, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলায় আরেকটি মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস)। এতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং সোসাইটি, বিজেএসসি, সায়েন্স ক্লাব, আইটি সোসাইটি, বন্ধু, অনুপ্রাসসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি।

সর্বশেষ খবর