বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেশি ভাড়ার লোভে তিন বাসের সঙ্গে পাল্লা

♦ দুই শিক্ষার্থী নিহতে জবানবন্দি চালকের
♦ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে হলো জেব্রা ক্রসিং
♦ ঢাকায় গাড়ি চুক্তিভিত্তিক না চালানোর সিদ্ধান্ত

আদালত প্রতিবেদক

বেশি ভাড়ার লোভে তিন বাসের সঙ্গে পাল্লা

মাসুম বিল্লাহ

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে জাবালে নূর পরিবহনের বাসই চাপা দেয়। ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। গতকাল হত্যার দায় স্বীকার করে ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চালক মাসুম বিল্লাহ। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

আদালতসূত্র জানায়, জবানবন্দিতে আসামি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘জাবালে নূর বাসের (রেজি. নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭) চালক আমি। বেশি যাত্রী পেয়ে বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায় আগে যাত্রী ওঠানোর জন্য তিনটি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিলাম। ২৯ জুলাই জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তার পাশে শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। বেশি যাত্রী বাসে ওঠানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রছাত্রীদের দিকে গড়ি ঢুকিয়ে দিই। পরে গাড়ি থেকে নেমে দেখি ১০-১২ জন আহত হয়েছে এবং দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তখন জনরোষের ভয়ে আমি পালিয়ে যাই।’ এর আগে সাত দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আসামিকে আদালতে হাজির করেন। পরে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়। ঘটনার দিনই নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। পরে মালিক, চালক ও চালকের সহকারীদের গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন, জাবালে নূর পরিবহনের অন্য দুই বাসের চালক সোহাগ আলী ও জুবায়ের এবং হেলপার এনায়েত হোসেন ও রিপন বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।

এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের মালিকের জামিন : এদিকে এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের মালিক জুনায়েদ হোসেন লস্করকে জামিন দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম ফাহাদ বিন আমিন এ আদেশ দেন। ৩ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে একটি মিনিবাসের চাপায় সাইফুল ইসলাম রানা নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই উত্তেজিত জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিদর্শন করার ঘোষণা মালিকদের : রাজধানীর গণপরিবহন ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করে টার্মিনালে গিয়ে পরিদর্শন করা হবে। একই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকাভিত্তিক পরিবহন মালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এ ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর বিআরটিসি ভবনে অবস্থিত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, রাজধানীতে কোনো গাড়ি চুক্তিভিত্তিক চলবে না। এভাবে চললে প্রতিযোগিতা বেশি হয়, দুর্ঘটনা বাড়ে। আমরা এটা করতে দেব না। যে কোম্পানি এটা মানবে না তার লাইসেন্স বাতিল করার জন্য আমরা সুপারিশ করব। আর আমাদের সমিতির আওতায় হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেব।

তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) থেকে আমরা প্রতিটি বাস টার্মিনালে চেক করব কোনো গাড়ি ফিটনেস সনদ, চালকের লাইসেন্স ছাড়া চলে কিনা। কারও (চালকের) কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে তাকে চলতে দেওয়া হবে না। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালিকদের সময় দিচ্ছি তারা যেন এর মধ্যে সবকিছু ঠিক করে নেয়। চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ করতে সড়কের পাশে টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা রাখার জন্য সিটি করপোরেশনকে আহ্বান জানান। এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সবাই প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের পূর্ণ সমর্থন করি। এই আইন ১৯৮৩ সালের আইন থেকে অনেক সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য। আমরা সমর্থন জানাই। তবে এই আইনে জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা কিছু সংশোধনী প্রস্তাব দেব। এগুলো সরকার মানলেও সমর্থন থাকবে, না মানলেও সমর্থন থাকবে।

সর্বশেষ খবর