বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা চান উপাচার্যরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। দাবি আদায়ের সঙ্গে তাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে এই শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা যাতে কারও উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী গতকাল সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক জরুরি মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করছিলেন। নিরাপদ সড়ক দাবিতে সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী আন্দোলন ইস্যুতে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনসহ অন্যরা এতে বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথির ভাষণে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, প্রতিবাদকে সমর্থন করি। তারা আমাদের নানা বিশৃঙ্খলা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের আন্দোলন বন্ধ করার পর কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছিল। নানা গুজব ছড়িয়ে এই শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এই শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হয়েছিল। ফোনালাপ ফাঁসের মাধ্যমে দেশবাসী তা জানতে পেরেছে। নাহিদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দাবি মেনে নেওয়ার পরও যারা উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন কার্যক্রম সহ্য করা হবে না। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষও হতে হবে। জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি শিক্ষার্থীদের শেষ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কেউ ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন না। ব্যবসা নয় বরং শিক্ষায় অবদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করুন। সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। আমরা চাই না একটি শিক্ষার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। চাই না তারা কারও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হোক। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা থাকলে যথাসময়ে এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। সভাপতির ভাষণে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষার্থীদের গুজবে কান দিয়ে হুজুগে মাতলে হবে না। ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা যে যা অপরাধ করেছে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হোক। তারা কোমলমতি। তাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে ‘জেনারেল অ্যামনেস্ট্রি’ করার অনুরোধ জানান। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করলেও মাত্র একজন ছাড়া কেউ কারণ জানাতে পারেনি। সবাই হুজুগে আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিল। তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। নিয়মিতভাবে ক্লাস চলছে। আশা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ডালিম চন্দ্র বর্মণ বলেন, আন্দোলনরতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থীর যেন অকল্যাণ না হয়। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, পুরো ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছড়িয়ে আছে। নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে লিখিত চিঠিতে জানিয়েছিলাম। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বেনজির আহমেদ বলেন, একসঙ্গে কাজ করলে যে কোনো সমস্যা সমাধান করা যাবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন অন্যায় নয়। সড়কে চালকদের কোনো দয়া-মায়া নেই। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর